নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের অধীনে স্বাস্থ্য বিভাগে ১১২জন ডাক্তার, ১৭৫ জন স্বাস্থ্য সহকারি-সহ ৬১৮টি শূন্য পদের বোঝা ঘাড়ে নিয়েই চলছে কার্যক্রম। ফলে ভেঙ্গে পড়ছে এ জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান।
নোয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৫টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৫৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২টি স্কুল হেলথ ক্লিনিক, ১টি টিবি ক্লিনিক ও ৩টি মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল সমূহে দীর্ঘদিন থেকে ১২২ জন ডাক্তার, ১৭৫ জন স্বাস্থ্য সহককারি ও ৩২১ জন ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ৫টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ৩টি পদই শূণ্য। সদর উপজেলায় ডাক্তারের ১৪টি পদের মধ্যে ১টি, বেগমগঞ্জ উপজেলায় ৩৭টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ৯টি পদ শূণ্য। সোনাইমুড়ি উপজেলায় ৩২টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূণ্য। সেনবাগ উপজেলায় ৩০টি ডাক্তার পদের মধ্যে ১৪টি পদ শূণ্য, কোম্পানীগঞ্জের ২৯টির মধ্যে ১৭টি ডাক্তারে পদ শূণ্য। হাতিয়ায় ৩১টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ২২টি পদই শূণ্য। সুবর্ণচরে ২৬টির মধ্যে ১৪টি পদই শূণ্য, কবিরহাট উপজেলায় ১৫টি পদের মধ্যে ৭টি পদই শূণ্য। চর আলগী ২০ শয্যা হাসপাতালে ৫টি ডাক্তারের পদের মধ্যে ৩টি পদ শূণ্য, টি.বি ক্লিনিকে ২টি পদের মধ্যে ১টি শূণ্য। এ নিয়ে জেলার ৯টি উপজেলায় ২৬০টি ডাক্তারের পদের মধ্যে রয়েছে ১৩৮ জন, বাকি ১২২টি পদই শূন্য।
এছাড়া জেলায় স্বাস্থ্য সহকারী মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৪৩০টি পদের মধ্যে ১৭৫টি পদই শূণ্য। ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে জেলায় ৭ জন প্রধান সহকারীর মধ্যে ২টি পদ শূণ্য।
নোয়াখালী স্বাস্থ্য বিভাগ-২
হিসাব রক্ষকের ১৭টি পদের মধ্যে ১০টি পদই শূণ্য, ফার্মাসিস্ট ৪৫টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূণ্য, ল্যাব টেকনেশিয়ান ২৪টির মধ্যে ৪টি শূণ্য, ডেন্টাল টেকনেশিয়ান ৭টির মধ্যে ১টি, রেডিও গ্রাফার ৯টির মধ্যে ১টি, কোল্ডচেইন টেকনেশিয়ান ১টির মধ্যে ১টি পরিসংখ্যানবিদ ৯টির মধ্যে ২টি, ভান্ডার রক্ষক ১৩টির মধ্যে ৬টি, লেডি হোমভিজিটর ২টির মধ্যে ২টি, অফিস সহকারি ২২টির মধ্যে ১৭টি, ক্যাশিয়ার ১০টির মধ্যে ৩টি, সহকারি নার্স ৫টির মধ্যে ৩টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২৯টির মধ্যে ৬টি, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৮৬টির ৯টি, ড্রাইভার ১১টির মধ্যে ৩টি, স্টোর ক্লার্ক ১টির মধ্যে ১টি, জুনিয়র মেকানিক ১টির মধ্যে ১টি, ফিজিও থেরাপি ৬টির মধ্যে ২টি, কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার ৩১৯ জনের মধ্যে ৫৪টি পদই শূন্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা স্বাচিপ ও বি.এম.এ. সভাপতি ডা. এম.এ.নোমান জানান, দীর্ঘদিন পদগুলি শূন্য থাকায় জেলার স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। তবু ভাগ্য ভাল জেলায় অনেকগুলো প্রাইভেট হাসপাতাল থাকায় সাধারণ রোগীরা বেঁচে আছে।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, এ উপজেলায় ৩২টি ডাক্তার পদের ১৬টি শূন্য। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আবার যারা আছে তারাও প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সময় মত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা প্রদান করেন না। বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, এখানে ৩৭টি পদের মধ্যে ৯টি শূন্য, যারা আছে তাদের বসার জায়গা দিতে পারি না। তারা সেবা দিবেন কি করে। হাতিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, ৩১টি পদের ২২টি ডাক্তারের পদই শূন্য। বাকি যে ডাক্তার আছেন, তারা বেশির ভাগ সময়ই থাকেন জেলা সদরে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মজিবুল হক জানান, এ শূন্য পদগুলি পূরনের জন্য বহু লেখালেখি করছি, এমনকি মন্ত্রী মহোদয় নোয়াখালী আসলে তাঁর হাতে হাতে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার