বাগেরহাটের শরণখোলায় আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যানের সামাজিক বিচারের নামে যুবকের পুরুষাঙ্গে ইট ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দু-গ্রুপ মুখোমুটি অবস্থান নিয়েছে। ঘটনার সমর্থন ও প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেছে দুই পক্ষ।
ওই ঘটনায় খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খাঁন মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়েকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আওয়ামী লীগের একপক্ষ (কামাল গ্রুপ) বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে। বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিলটি রায়েন্দা বাজার প্রদক্ষিণ করে শরণখোলা প্রেসক্লাব চত্বরে সভায় মিলিত হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর বাবুল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তাফা মধু, জালাল আহমেদ রুমি, যুবলীগ নেতা আজমল হোসেন মুক্তা, ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান স্বপন ও হাসান মীর। বক্তারা ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জানিয়েছেন।
অপারদিকে, গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই বর্বরতম ঘটনার নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে আওয়ামী লীগের অপরপক্ষ (এমপি মোজাম্মেল গ্রুপ) নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।
এদিন বিকেলে রায়েন্দা বাজারের শের-এ বাংলা সড়কে মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আসাদুজ্জামান মিলন, কৃষক লীগের সভাপতি এম ওয়াদুদ আকন, খোন্তাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল কবীর কিচলু, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন নান্টু, যুবলীগ নেতা জিয়াউদ্দিন তালুকদার প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, মহিউদ্দিন খান চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে যুবকরে গোপনাঙ্গে ইট ঝুলিয়ে তিনি যে নির্যাতন করেছেন তাতে এলাকার ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে তিনি বীর দর্পে পুলিশের সামনে ঘোরাফেরা করছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মিছিলে নিজেই অংশগ্রহণ করেছেন। ওই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য বানিয়াখালী গ্রামের জনৈক ব্যক্তির মেয়ের সাথে পার্শ্ববর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা গ্রামের আলাউদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবকের মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ৯ এপ্রিল ওই আলাউদ্দিন ওই মেয়ের বাড়িতে আসেন। স্থানীয়রা এলাকায় অপরিচিত দেখে ওই যুবককে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে তার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন সামাজিক বিচারের নামে প্রকাশ্যে একটি চায়ের দোকানের সামনে বেধড়ক পিটিয়ে তার পুরুষাঙ্গে ইট বেঁধে দাড় করিয়ে রাখেন। মানবতা বিবর্জিত এমন বিচারের বিডিও এবং স্থির চিত্র ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নিন্দার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একপর্যায়ে গত ১৭ এপ্রিল স্বপ্রনোদিত হয়ে পুলিশ শরণখোলা থানায় চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনকে এক নম্বর আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় রেজাউল করিম (২৫) ও নূর হাসান মুন্সী (২২) নামের দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।