অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। এখনও চলছে নিরন্তর অপেক্ষা। ইলিয়াস আলী ফিরবেন, আগের মতোই দলের হাল ধরবেন, মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, সেইসাথে তার পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠবে নির্জীব হয়ে পড়া তার বৈঠকখানা, হাসি ফুটবে তার মায়ের মুখে, জেগে ওঠবে সিলেট বিএনপি- এমন প্রত্যাশা নিয়েই বিএনপির নেতাকর্মীরা তার ফিরে আসার পথ চেয়ে অপেক্ষায়।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পাঁচ বছর পেরিয়েছে গত সোমবার। সময়ের স্রোত যতো গড়িয়েছে, ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে বিএনপির আন্দোলনও ততোই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তবে আরও একবার ইলিয়াসের জন্য রাজপথে আওয়াজ তুলতে চায় বিএনপি। শিগগিরই সিলেটে ‘বড় সমাবেশ’ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে জেলা ও মহানগর বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে সিলেটে বড় সমাবেশ করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করছেন জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে কথা বলতে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিএনপির এ তিন শীর্ষ নেতা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সমাবেশের বিষয়ে কথা বলবেন। তারা চাইছেন, ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ‘গুম হওয়া’ নেতাকর্মীদের সন্ধান দাবিতে সিলেটে বড় আকারের সমাবেশে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার উপস্থিতি। এজন্য কেন্দ্রের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারেই সমাবেশের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করা হবে।
আলাপকালে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘ইলিয়াস আলী এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুম হওয়া সকল নেতাকর্মীদের সন্ধান দাবিতে আমরা বড় আকারের সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করেই তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘ইলিয়াস ইস্যুতে বড় আকারের সমাবেশ করতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করার জন্য মঙ্গলবার জেলা-মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা ঢাকায় গেছেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারেই সমাবেশ করার পরবর্তী ধাপের দিকে আমরা এগুবো।’
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সময় তার সাথে ছিলেন ব্যক্তিগত গাড়িচালক আনসার আলী। ইলিয়াসের সাথে সাথে আনসার আলীকেও মেনে নিতে হয় একই ভাগ্য। তারপর পেরিয়ে গেছে ৬০ মাস।
ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠেছিল সারাদেশ। দফায় দফায় হরতাল পালন করেছিল বিএনপি। ছিল বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, দোয়া মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি। সেই সময় ইলিয়াসের জন্মস্থান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা ছিল অগ্নিগর্ভ। ওই বছরই ২৩ এপ্রিল হরতাল চলাকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন তিন বিএনপি কর্মী।
সবমিলিয়ে ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’ ইস্যুতে সারাদেশে প্রাণ হারান আট জন। আহত হন অনেকে। দিন গুণতে গুণতে, প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে চেয়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো ফিরেননি ইলিয়াস আলী। ফেরা হয়নি গাড়িচালক আনসারেরও।
বিডি প্রতিদিন/২০ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা