নওগাঁর পত্নীতলায় আম, লিচু ও পেয়ারার সমন্বিত বাগান গড়ে কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য সফলতা অর্জন করেছেন কৃষক দেলোয়ার হোসেন বাবন। তিনি পত্নীতলা উপজেলার নকুচা গ্রামে হাজী বাবন নামে পরিচিত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসব বাগান থেকে লাখ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
কৃষিবিদ ড. গোলাম মোস্তফার পরামর্শে ২০০৫ সালে থেকে নিজের জমিতে গড়ে তুলেছেন আম ও লিচু বাগান। এ বছর নতুন করে গড়ে তুলেছেন থাই পেয়ারার বাগান। তার সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই এখন বাগান করার পরিকল্পনা করছেন এবং অনেকেই বাগান গড়ে তুলছেন। আর এসব বাগান পরিচর্যায় মজুরী হিসেবে কাজ করে বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
২০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আম, ১০ বিঘায় লিচু এবং ১৬ বিঘা জমিত গড়ে তুলেছেন থাই পেয়ারার বাগান। এসব বাগানে ৬শ' আম গাছ, ২৩৫টি লিচু গাছ এবং ৩ হাজার ৫শ' পেয়ারা গাছ রয়েছে। আম বাগানে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, বারী-৪, ফজলী এবং আমরূপালী জাতের গাছ আছে। লিচু বাগানে রয়েছে বোম্বে, মাদ্রাজী এবং চায়না-৩।
অপরদিকে পেয়ারা বাগানে রয়েছে থাই জাতের পেয়ারা। ২০১৬ সালে কেবলমাত্র আম বাগান থেকে মোট আম বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ টাকা। মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। খরচ বাদে লাভ এসেছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে এসব বাগান হওয়ায় একদিকে যেমন ফলন কম। অন্যদিকে খরচও বেশি হয়। তবে গাছগুলো যত বড় হবে ফলন তত বেশি হবে। অন্যদিকে খরচও কমে যাবে। তখন মুনাফা আরও বেশি হবে। আর কয়েক বছর পরে এসব বাগান থেকে প্রতি বছর ১৫-২০ লাখ টাকা আয় হবে। যা অন্য যে কোনো ফসল চাষের থেকে অনেক লাভজনক।
বাগান মালিক দেলোয়ার হোসেন বাবন বলেন, তার ১০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত লিচু বাগানে এ বছর প্রথম লিচু ধরেছে। প্রথম বছর এই বাগান থেকে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করবেন বলে তিনি আশা করছেন। যথারীতি এই বাগানের লিচু গাছগুলো যত পুরাতন হবে ততই লাভজনক হবে। আম এবং লিচুর বাগান নিজস্ব জমিতে হলেও ১৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে থাই পেয়ারা বাগান গড়ে তুলেছেন বাবন।
বাগানে এ বছর পেয়ারা ধরতে শুরু করেছে। আগামী ১০ বছর পর্যন্ত এই বাগানের গাছগুলো ফল প্রদান করবে। জমির লিজ খরচ, পরিচর্যা খরচ বাদ দিয়ে পুরো সময়ে ৫০ লাখ টাকা আয় করবেন। তার এই বাগান ইতোমধ্যেই এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তাদেরকেও বাগান সাজানোর ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে তুলেছে। অনেকেই তার এই বাগানের লাভ দেখে তাদের জমিতে বাগান গড়ে তুলতে শুরু করেছেন।
এলাকার কৃষক আতোয়ার রহমান বলেন, হাজী বাবনের সফলতা দেখে সামান্য পরিমাণ জমি লিজ নিয়ে আম বাগান গড়ে তুলেছি। এলাকার অনেক কৃষক এখন সমন্বিত বাগানের কথা ভাবছেন। শ্রমিক তরিকুল ইসলাম বলেন, বাগানে মজুরী হিসেবে প্রতিদিন ১২/১৫ জন শ্রমিক পরিচর্যার কাজ করেন। প্রতিদিন ৩শ' টাকা করে মজুরী হিসেবে পাচ্ছেন। তার মতো বেকাররা বাগানে কাজ করে এলাকার অনেক মানুষ সংসার নির্বাহ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিৎ কুমার বলেন, জেলায় বিশেষ করে পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও নিয়ামতপুর উপজেলা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। পানির সমস্যায় বছরের বেশির ভাগ সময় পড়ে থাকে। এসব ফসলি জমিতে ব্যাপকভাবে আম বাগান গড়ে উঠেছে। এলাকার কৃষকরা ধানের থেকে আম উৎপাদনে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতি বছর এসব এলাকায় এক হাজার একর করে বাগান বৃদ্ধি হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/৭ জুন ২০১৭/হিমেল