বেসামরিক বিমান ও ট্রাভেল এজেন্সি নীতিমালা সংশোধন অধ্যাদেশ ও ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব অধ্যাদেশে টিকিটের মূল্য নির্ধারণের জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে প্রতারণা ও হয়রানি রোধে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও এক বছর জেল বিধান রাখা হয়েছে। বিমান টিকিটের দামও যৌক্তিক করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন। বিমান উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল ব্যবসায় স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ‘বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ ও ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’। নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিতের ১১টি নতুন কারণ যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ টিকিট বিক্রি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অননুমোদিত লেনদেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, তৃতীয় কোনো দেশ থেকে টিকিট কেনাবেচা, গ্রুপ বুকিংয়ের পর যাত্রীর তথ্য পরিবর্তন ইত্যাদি। এসব কর্মকাণ্ডকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা বলেন, আইনি দুর্বলতার কারণে গত ১৬ বছরে দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়েছিলেন বিদেশগামীরা। দেশের আকাশপথে যাত্রীদের ৮০ শতাংশের বেশি অভিবাসী কর্মী। নতুন দুটি অধ্যাদেশ কার্যকর হলে এ বিশাল যাত্রীগোষ্ঠীসহ সাধারণ যাত্রীদের সেবা হবে আরও আধুনিক, নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব। অন্য অধ্যাদেশে সরকারকে একটি ‘বেসামরিক বিমান চলাচল অর্থনৈতিক কমিশন’ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বিমানবন্দরের ফি, চার্জ, রয়্যালটি ও ভাড়ার হার নির্ধারণে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। নতুন আইন অনুযায়ী একটি ট্রাভেল এজেন্সি আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সির কাছে বিক্রি করতে পারবে না, এতে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ হবে বলেও জানান তিনি।
বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনসের জন্য সাধারণ বিক্রয় প্রতিনিধি (জিএসএ) নিয়োগকে ঐচ্ছিক করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই সঙ্গে দেশি এয়ার অপারেটরদেরও জিএসএ নিয়োগে সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো এয়ার অপারেটরদের ট্যারিফ দাখিল ও মনিটরিংয়ের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব নীতির আওতায় কার্বন নিঃসরণ কমানো, সাসটেইনেশন অ্যাভিয়েশন ফুয়েল (এসএএফ) ব্যবহার ও টেকসই নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা যুক্ত হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেন ও ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ ট্রাভেল ব্যবসায় অবৈধ অর্থ লেনদেন, মানি লন্ডারিং, টিকিট মজুতদারি, প্রতারণা ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার প্রমাণ সাপেক্ষে কোনো ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সাময়িক স্থগিত করতে পারবে। প্রতারণা বা আর্থিক আত্মসাতের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতাও পাবে।