সূর্য ওঠার সাথে সাথে বঙ্গোসাগরে স্নান শেষ করেছেন হাজারো সনাতন ধর্মালবলম্বী নর-নারী। শনিবার সকালে কুয়াকাটা সৈকতে স্নানের আগ মুহূর্তে অনেকে চুল ন্যাড়া করাসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিণ্ডদান করেন।
পুণ্যের আশায় মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে হাতে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর ইত্যাদি সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন।
পুরো সৈকত জুড়ে উলুর ধ্বনি ও গীতা পাঠ করে আগত পুণ্যার্থীরা গঙ্গা স্নান করেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সৈকতে অস্থায়ী মেলা বসেছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সৈকতে হাজার হাজার মানুষের মহামিলন মেলায় পরিণত হয়। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর টহল ছিল চোখে পড়ার মতো।
কলাপাড়া পৌর শ্রীশ্রী মদন মোহন সেবাশ্রমের পুরহিত পরিমল চন্দ্র দাস জানান, প্রতি বছর কুয়াকাটায় স্নান শেষে কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম আঙ্গিনায় রাস মেলা চলে আসছে।
ঢাকা থেকে আসা পঞ্চানন বিশ্বাস সৈকতে দাঁড়িয়ে গামছা দিয়ে শরীর মুছছিলেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল কুয়াকাটায় স্নান করার। এখানে এসে র্নিঘুম রাত কাটিয়ে ভরা পূর্নিমায় সাগরের জলে পুণ্যস্নান শেষ করেছি।
পুণ্যার্থী বিজলী রানী জানান, আমার ছোট ছেলের মানত ছিলো। চুল ন্যাড়া করে স্নানের মাধ্যমে মানতের পূর্নতা সম্পন্ন করেছি।
উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানায়, আমরা সফলভাবে অনুষ্ঠান পালন করেছি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুল করিম জানান, বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল অব্যাহত ছিলো। তরে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খরব পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তানভির রহমান জানান, রাস উৎসব কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একক অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি এখন একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে আগত পুণ্যার্থী, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়ে ছিল। এছাড়া পুরো সৈকত সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজুর রহমান জানান, রাস উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্থরের নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড.মাছুমুর রহমান বলেন, রাস মেলা পটুয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর উৎসবকে নিরাপদ ও বিড়ম্বনা মুক্ত রাখতে নিরলস কাজ করেছে প্রশসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বিডি প্রতিদিন/৪ নভেম্বর, ২০১৭/ফারজানা