সংবাদ সংগ্রহের কাজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে গিয়ে ইউএনওসহ ছয় সংবাদকর্মী, পৌর কাউন্সিলর ও জনপ্রতিনিধিদের লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান হাসনাত জামান চৌধুরী জর্জের অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা। আজ দুপুরে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে।
জানা গেছে, জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত জামান চৌধুরী জজ রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফিরুজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে অভিযোগের বর্ণনা দেন। এ বিষয়ে জানার জন্য আজ দুপুরে জেলার বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টুয়েন্টিফোর'র প্রতিনিধি সরকার হায়দার, এনটিভি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, আরটিভি’র সাংবাদিক রাজিউর রহমান রাজু, মানবজমিনের সাংবাদিক সাবিবুর রহমান সাবিব, ডিবিসির মো. লুৎফর রহমান, ৭১’র টিভির মো. রফিকুল ইসলাম দেবীগঞ্জ যান। তারা দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। সংবাদ সংগ্রহের সময় আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, আবু বক্কর সিদ্দিক আবু, যুবলীগের সভাপতি সংগ্রাম প্রধানসহ ৬ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
এসময় আকষ্মিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাসনাত জামান চৌধুরী জজের অনুসারী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ মিঠু, সামিনুর রহমান শাওন, যুবলীগ নেতা আয়নাল হকসহ যুবলীগ ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী সাংবাদিকদের গালাগালি শুরু করে। তারা চিৎকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নিউজ করতে এসেছেন, বের হন। এক পর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিকদের ডেকে ও টেনে নামানোর চেষ্টা করে। এসময় আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর আকছাদুল ইসলাম তাদের বাঁধা দিলে তাকে মারপিট শুরু করে। তারা এনটিভি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদকে ধাক্কাধাক্কি করে। এসময় সাংবাদিকরা দৌড়ে পৌর কার্যালয়ের অভ্যন্তরে গেলে তারা সকলকে দুই ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক,উপজেলা যুবলীগের সভাপতিসহ ছয় জন পৌর কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। তারাও লাঞ্চিত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফিরুজুল ইসলাম ও সাংবাদিকরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল, পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দিন আহাম্মেদ ও দেবীগঞ্জ থানায় মোবাইলে অবহিত করলে দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসে ইউএনও, কাউন্সিলর ও সাংবাদিকদের উদ্ধার করে।
এদিকে, পৌরকাউন্সিলর ও পরিবহণ শ্রমিক নেতা আসাদুলকে মারপিট করার প্রতিবাদে দেবীগঞ্জের করতোয়া নদীর টোল প্লাজা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বিকেলে অবরোধ শুরু করলে ১ ঘন্টা পর পুলিশ এসে সড়ক অবরোধ তুলে দেয়।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনা স্থলে যাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফিরুজুল ইসলাম জানান, সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পৌর কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। এসময় যুবলীগের নেতারা ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের গালাগালি ও লাঞ্ছিত করে এবং আমাকেসহ পৌর কাউন্সিলর ও উপস্থিত কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে দুই ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে । বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, সংবাদকর্মীরা আমাকে ফোন করে আসেনি। আমার ব্যাপারে নিউজ করবে আমাকে জানাবে না এটা হয় না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার