প্রযুক্তি ছোঁয়া লেগেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া লতাচাপলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খভাবে লাইনে দাড়িয়ে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করে। কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি থাকলে অভিভাবকের মোবাইল ফোনে পৌঁছে যায় এসএমএস বার্তা। ১০টি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে চলছে শ্রেণি কক্ষের পাঠদান। ক্লাস নেওয়া হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে মাধ্যমে। সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষিকা নজরদারি করছেন শ্রেণী কক্ষের পাঠদান। দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। অনলাইনের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে পরীক্ষার ফলাফল। আধুনিক পাঠদান ও ২৭টি উদ্ভাবনী শিক্ষা পদ্ধতি বিদ্যালয়টিকে করে তুলেছে অনন্য। এরই মধ্যে ডিজিটাল মডেল স্কুল হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে সবার কাছে।
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার একমাত্র শিশু বান্ধব বিদ্যালটিতে প্রবেশের সাথে সাথেই চোখে পড়ে শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত প্রাঙ্গন। আনন্দে উচ্ছাসিত শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত দোলনা, সৃষ্টিসহ নানা খেলার উপকরণ নিয়ে। নজর কেড়ে নেয় দেয়ালের রংতুলির বর্ণিল নির্বাক চিত্র। দেয়াল জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে সকল ইতিহাসসহ বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়নের নানা চিত্র এবং বিবরণ।
রয়েছে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত মনীষীদের প্রতিকৃতি, জীবনী, উক্তি। কম্পিউটার ল্যাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ চালিয়ে জানার চেষ্টা করছে বিশ্বকে। এছাড়া অবিভাবকদের বিনোদন কক্ষ, পাঠাগার সহ ভৌগলিক কর্নার, প্রযুক্তি কর্নার, গ্রন্থাগার, স্পোর্টস কর্নার, বিজ্ঞানাগার, সততা স্টোর, গনিত ল্যাব, সততা কুটির, মহানুভবতার জ্ঞানসহ ফুল, ফল, সবজির বাগান সাজানো গোছানো রয়েছে। প্রতিদিন ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করতে হয় বলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ পাসের হারসহ ক্রীড়া-সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে বাংলাদেশে চতুর্থ স্থান লাভ করেছে বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অনন্ত মুখার্জী বলেন, সাগর পাড়ের অনাগ্রসর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য ১৯৩৬ সালে রাখাইন বাচিন তালুকদার প্রতিষ্ঠা করেন এ বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা যোগদান করার পর দিয়েছেন বিদ্যালয়ের এক ভিন্ন রূপ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমুস সাকিব খান কনা বলেন, একসময়ের এ অপরিপাটি বিদ্যালয়টিকে প্রথমে মডেল বিদ্যালয় উন্নীত করি। এখন রূপ দেয়া হয়েছে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার আলোয়। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পব্দতিতে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। এরফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। ঝড়ে পড়ার হার শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। পাশের হার হয়েছে শতভাগ। গ্রামীন জনপদের শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞান। যা তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনের পথ চলাকে সহজ করে দেবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, জেলার প্রথম মডেল বিদ্যালয় হিসেবে লতাচাপলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আদলে পর্যায়ক্রমে সকল বিদ্যালয়কে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২৯ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল