মালকা বানু ও মনু মিয়ার প্রেমের উপাখ্যানে কোনো ট্র্যাজিক পরিণতি বা তোলপাড় করা হৃদয়াবেগ নেই। তবু চট্টগ্রামের এই কাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে লোকগান, পালা, পুঁথি এমনকি চলচ্চিত্রও।
১৯৭৪ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তি পায় ফয়েজ চৌধুরী পরিচালিত শাবানা ও জাভেদ অভিনীত সাদা-কালো চলচ্চিত্র ‘মালকা বানু’। সুপারহিট এই চলচ্চিত্রের পুনর্র্নির্মাণ করা হয় ১৯৯১ সালে। চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘রঙিন মালকা বানু।’ কামারুজ্জামান পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পা। এই চলচ্চিত্রও হয়েছিল ব্যবসাসফল। কে ছিলেন এই মালকা বানু ও মনু মিয়া? এমন সাদামাটা প্রেমকাহিনি কেনইবা যুগ যুগ ধরে এখনো মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। গবেষক শামসুল আরেফীনের মতে, মনু মিয়া ও মালকা বানুর কাহিনি টিকে থাকার পেছনে রয়েছে এ ঘটনাকে উপজীব্য করে রচিত গীত ও পালা। চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে বিয়ের অনুষ্ঠানে নারীরা মালকার গীত গেয়ে শোনান। এ নিয়ে মানুষের আগ্রহ জাগে মালকা বানু ও মনু মিয়ার প্রেমকাহিনি নিয়ে। মনু মিয়া কেবলই লোককাহিনির চরিত্র ছিল না। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামে এখনো তাঁর নির্মিত মসজিদ রয়েছে। আর মালকা বানুর স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নে। এখানে রয়েছে মালকা বানুর মসজিদ ও দিঘি। প্রচলিত নানা কাহিনি ঘেঁটে জানা যায়, মালকা বানু ছিলেন মনু মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁর প্রথম স্ত্রী খোরসা বানুর কোনো সন্তান ছিল না। বালিকা মালকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মনু মিয়াকে নদীতে নৌকায় চড়ে শ্বশুরবাড়ি যাবেন না বলে। মনু মিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রমত্ত শঙ্খে বাঁধ দিয়ে তিনি বালিকা মালকার মন রাখবেন। যেই কথা সেই কাজ। শঙ্খে বাঁধ দিয়ে মনু মিয়া তাঁর বালিকা বধূকে নিয়ে গেলেন শঙ্খের অপর পারে আনোয়ারায়। এর আগে অনুষ্ঠিত হলো এক জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে। হীরা, জহরত, মণিমুক্তা দিয়ে সাজানো হলো মালকা বানুকে। রচিত হলো বহু গান ও পালা। এর মধ্যে ‘মালকা বানুর দেশে রে, বিয়ার বাইদ্য আল্লা বাজে রে’ গানটি এখনো লোকের মুখে মুখে ফেরে। তবে মালকা ও মনু মিয়ার দাম্পত্য সুখের হয়নি। সেই ঘরেও জন্মায়নি কোনো সন্তান। জমিদার মনু মিয়ার মৃত্যুর পর মালকা বানু বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই থাকেন আমৃত্যু। চট্টগ্রামের সেই মালকা বানু আর মনু মিয়ার বাস্তব জীবনে যাই ঘটুক না কেন তাঁদের প্রেমকাহিনি এখনো মিথ হয়ে আছে।