নদনদীগুলোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে। ভাঙনের তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। জোয়ারের পানিতে এরই মধ্যে নোয়াখালীর নিঝুমদ্বীপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপও আবার প্লাবিত হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা জোয়ারের পানিতে ফুঁসে উঠেছে পদ্মা নদী। ভাঙন শুরু হয়েছে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলসহ নদীর উভয় পাড়ের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কুশিয়ারচর এলাকায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার আপৎকালীন জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করা হলেও এ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মালুচি গ্রামে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, সার্বক্ষণিক ভাঙন এলাকা মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।
বরিশাল : বরিশালের বাবুগঞ্জে সন্ধ্যা নদীর আকস্মিক ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে চার পরিবারের ঘর। গতকাল ভোরে উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরহোগলপাতিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান। তিনি আরও জানান, আকস্মিক ভাঙনে সন্ধ্যা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে ওই গ্রামের মজিদ বেপারী, আজিজ বেপারী, সালেক বেপারী ও বারেক বেপারীর ঘর। তাদের প্রত্যেককে দুই বান করে টিন ও খাবার দেওয়া হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে।
গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে ঝুপঝাপ শব্দ শুনতে পাই। দেখে মনে হলো এখানে ২০০ হাত পানি হয়ে গেছে। তার পর অনেক জায়গা নিয়ে বসে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবার কোনো মালমাল সরানোর সুযোগ পায়নি। এ সময় নদীপাড়ের গাছপালাও নদীতে তলিয়ে গেছে।
আজিজ বেপারী জানান, হঠাৎ করে গাছপালা ও ঘরবাড়ি দেবে যাচ্ছিল। সরানোর কোনো সুযোগ আমরা পাইনি। ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে সবুজ বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চরহোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় একটি জামে মসজিদ, ভাঙারমুখ লঞ্চঘাটসহ ২৫ বাড়িঘর।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : অমাবস্যার জো ও নিম্নচাপের প্রভাবে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই দফা জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় এ ক্ষয়ক্ষতি হয়। সৈকতের ঝাউবাগানসংলগ্ন জাতীয় উদ্যান ও বেড়িবাঁধ থেকে সৈকতে প্রবেশের সড়কে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন হোসেনপাড়া এলাকার সড়কের প্রায় ৩০ মিটার ভেঙে ওই গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে ট্যুরিজম পার্কসংলগ্ন সৈকত সড়কে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভেঙে গেছে অসংখ্য গাছপালা। এ ছাড়া দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার সৈকতের বিভিন্ন স্থানের অব্যাহত বালু ক্ষয়ে মাটির স্তর বেড়িয়ে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, দুঃখজনক হলো, দফায় দফায় নিম্নচাপ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের তা বে সৈকতের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা কুয়াকাটার পর্যটনের জন্য বড় রকমের দুঃসংবাদ। এতে আগামী দিনে পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ভাঙনের তীব্রতায় কুয়াকাটার মেরিন ড্রাইভ ও সংলগ্ন সবুজায়ন প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তাল সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য, বিভিন্ন স্থাপনা, সৈকত রাস্তাসহ বিভিন্ন স্পট। তারা সৈকতের ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ, একটি সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তিতে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ তারিকুর রহমান তুহিন জানান, নিম্নচাপ ও জোয়ারের ঢেউয়ের তা বে গত দুই দিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যা আমরা পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।

নোয়াখালী : সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়ন ও চরএলাহী ইউনিয়নের কিছু অংশ ও হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অপর দিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় হাতিয়ার উত্তর অংশে ভূমিহীন বাজার, চেয়ারম্যান ঘাট, চতলার ঘাট, ইসলামগঞ্জ এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটার জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে আছে ৫ শতাধিক বাড়িঘর।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত উপজেলার টাংকির ঘাট ও চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানিতে অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো পরিবার। বিশেষ করে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের হরিণসহ বন্য প্রাণীগুলোর জন্য এ দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়াহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোংলা : নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে পুরো সুন্দরবন। সুন্দরবনের কোথাও সাড়ে তিন ফুট আবার কোথাও আড়াই ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। এতে বনের ও বন্যপ্রাণীর তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, গতকাল দিনের (দুপুরের) জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে আড়াই ফুট থেকে সাড়ে তিন ফুট। আড়াই ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে করমজল, জোংড়া, মরাপশুর, হাড়বাড়ীয়া, ঘাগরামারী ও লাউডোব এলাকা। এ ছাড়া সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে হিরণপয়েন্ট, কটকা ও কচিখালী বনাঞ্চল। বনের ভিতর কোথাও কোথাও আড়াই থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এতে বনের ও বন্যপ্রাণীর ক্ষতির তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ বনজুড়ে ৪০টি টাইগার টিলা (উঁচু টিলা) রয়েছে। বনের ভিতরে পানি বাড়লে বাঘ, হরিণ ও শূকরসহ অন্যান্য প্রাণী উঁচু টিলায় আশ্রয় নিয়ে থাকে। আর দুই আড়াই ঘণ্টা পর ভাটায় আবার এ পানি নেমে যায়। ফলে বন্যপ্রাণীর ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া ক্ষতি হবে না বনের অভ্যন্তরে থাকা ৮৮টি মিষ্টি পানির পুকুরেরও। কারণ পুকুরগুলোর পাড় অনেক উঁচু, তাই লবণ পানি ঢুকে মিষ্টি পানির আধারগুলোর ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।
কক্সবাজার : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন আবারও প্লাবিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় সেন্ট মার্টিনের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে এবং স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেন্ট মার্টিনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সেন্টমার্টিনের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, দ্বীপের তিনটি বড় পাড়া পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং শতাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। হোটেল-মোটেলসহ বিএন স্কুলকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে সাগর উত্তাল এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢেউয়ের আঘাতে আবারও মেরিন ড্রাইভের কক্সবাজারের টেকনাফের আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকার মেরিন ড্রাইভে এমন ভাঙনের দেখা মিলেছে। এর আগেও একই এলাকায় দুই দফায় ভাঙনের কারণে জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জিও ব্যাগ ডিঙিয়ে জোয়ারের ঢেউর ধাক্কায় আড়াই কিলোমিটার এলাকার অন্তত ১০টি স্থানে সড়কের অংশবিশেষ ভেঙে যাচ্ছে। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম স্থানীয় লোকজন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার এলাকার কয়েকটি স্থানে জোয়ারে ঢেউয়ের কবলে মেরিন ড্রাইভ ভাঙনের বিষয়টি অবহিত করেছেন। বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওকে জানানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উপকূল অশান্ত : উঁচু মাত্রার জোয়ারে প্লাবনের আশঙ্কা : উঁচু মাত্রার জোয়ারে দেশের উপকূলীয় এলাকা অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝোড়ো বাতাস বইছে এবং বৃষ্টিও হচ্ছে। অমাবস্যার কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও উঁচু মাত্রার এই জোয়ার দেখা দেওয়ায় উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ অতিক্রম করে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়েছে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। হচ্ছে বৃষ্টিপাত। এ অবস্থায় এরই মধ্যে ভেসে গেছে মৎস্য খামার ও ফসলের খেত। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন এলাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর জানায়, নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কাছে অবস্থান করছে। গত শুক্রবার সকাল ৬টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরে ১ থেকে ৩ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে। আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়ন ও চরএলাহী ইউনিয়নের কিছু অংশ ও হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানিতে অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো পরিবার। অপরদিকে জেলা শহর মাইজদীর বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রযেছে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।