কক্সবাজারে স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম মেরিন ফিশ এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স। কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় একশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স ৮ টি জোনে ভাগ করা হয়েছে।
এ্যাকুরিয়ামে গেলে দেখা যাবে উপরে মাছ, ডানে মাছ, বামে মাছ। অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছের ভিতর দিয়ে পথ চলতে হবে। তবে হঠাৎ সামনে এসে হাজির হতে পারে হাঙ্গর মাছ । মানুষ খেকো মাছ পিরানহা ধারালো দাঁত খুলে হা করে ছুটে আসতে পারে। গায়ে লেগে যেতে পারে কুচিয়া, কচ্ছপ, কাঁকড়া, আউসসহ সাগরের তলদেশের নানা কিট পতঙ্গ।
এর মাঝে সাগরের তলদেশের গাছ পালা, লতা, পাতা, গুল্ম, ফুল গায়ে পরশ লাগিয়ে দেবে। সাগরের পাহাড়, গুহা, তলদেশ উঁচু নিচু আর এলোমেলো সাগর পথ পাড়ি দিতে দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে।
এমন এ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ বিনোদনের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো মেরিন ফিস এ্যাকুরিয়াম হয়েছে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায়। যা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে সংযোজন করেছে বিনোদনের নতুন ধাপ। বেসরকারিভাবে এটি তৈরি করেছে রেডিয়েন্ট গ্রুপ। ৩০ নভেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, এটি মালেশিয়ার টেকনিক্যাল প্রকৌশলীর সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এই এ্যাকুরিয়াম নির্মানে সময় লেগেছে দুই বছর।
তিনি বলেন, এটি শুধু কক্সবাজারের জন্য নয়, বাংলাদেশের পর্যটনের জন্য বড় ভূমিকা রাখবে এটি। কারন এই এ্যাকুরিয়ামে বঙ্গোপসাগরের থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষন করা হয়েছে। অচেনা এবং বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছও রয়েছে। সাগরের বিলুপ্ত মাছ বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষনে একটি জাদুঘরও করা হচ্ছে। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি সাগরের জীববৈচিত্র ও প্রাণী সম্পর্কে জ্ঞান আহরনের একটি শিক্ষা কেন্দ্র।
এ্যাকুরিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক সমুদ্র বিজ্ঞানী মো: নুরুল বাকি জানান, একুরিয়ামে রাখা হয়েছে সামুদ্রিক শৈল মাছ, হাঙ্গর, পিতম্বরী, আউস, শাপলা পাতা, সাগর কুচিয়া, বোল, পানপাতা, বোল, পাঙ্গাস, চেওয়া, কাছিম, কাঁকড়া, জেলি ফিসসহ অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছ। কিছু বিরল প্রজাতির মাছ এখানে রয়েছে। এ্যাকুরিয়ামে রাখা হবে আরো অর্ধশত প্রজাতির মাছ।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড.আবদুল আলীম বলেন, দেশে বিভিন্ন প্রকার ও আকৃতির এ্যাকুরিয়াম রয়েছে। তবে বড় আকারের মেরিন ফিস এ্যাকুরিয়াম এটি দেশের প্রথম। এই এ্যাকুরিয়াম দর্শন করে বিনোদনের মাধ্যমে অজানা, অচেনা মাছকে চেনা যাবে।
রেডিয়েন্ট গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মো: নিজামুল ইসলাম জানান, ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারকে মোট ৮টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। ৮টি জোনের মধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, মার্কেটিং করার জন্য শপ, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, প্রার্থনা কক্ষ, শিশুদের জন্য খেলাধুলার জোন, বিয়ে বা পার্টির করার কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন করা যাবে বার-বি কিউ। এছাড়া রয়েছে সুপরিসর পার্কিং ও লাগেজ রাখার লকার। এখানেই এসে কোন রকম বিরক্তি ছাড়াই কিভাবে নিমিষেই ৪ থেকে ৫ ঘন্টা কেটে যাবে বুঝাই যাবে না। পুরো সেন্টার নিরাপত্তা বেষ্টনী সিসিটিভির আওতায় সর্বক্ষণ নিরীক্ষণ করা হয়।
এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স রক্ষণাবেক্ষনের স্বার্থে বিদেশীদের জন্য ২ হাজার টাকা, দেশী পর্যটক বা স্থানীয়দের জন্য ১ হাজার টাকা। তবে শিশুদের জন্য রয়েছে সুলভ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া মাপ অনুযায়ী শিশুদের জন্য রয়েছে ফ্রি ব্যবস্থা।
বিডিপ্রতিদিন/ ৩০ নভেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান