বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাচারকালে ৯ ট্রাক পাথর আটক করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি নিয়ন্ত্রণাধীন বনপুর ত্রিশডেবা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। শনিবার উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর-রামগতি এলাকা থেকে এই পাথরভর্তি ট্রাকগুলো আটক করা হয়।
এদিকে পাথর বোঝায় ট্রাক আটকের ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো অবৈধ পাথর ব্যবসায়ী এবং জব্দ পাথরের বিরুদ্ধে লামা উপজেলা প্রশাসন হতে কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বনপুর থেকে রামগতি সড়কে পাথরভর্তি ৯টি ট্রাক পড়ে আছে। বিজিবি বনপুর ক্যাম্পের সদস্যরা ট্রাকগুলো পাহারা দিচ্ছে। ট্রাকগুলো হল, চট্টমেট্রো-ট ১১-১৩৬৩, চট্টগ্রাম-ল ৭৬, চট্টমেট্রো-ট ১১-০৯৬১, ঢাকামেট্রো-ট ১১-২১৪৫, পিরোজপুর-ট ১১-০৩৭৬, ঢাকা-ল ২৬১, লট নং-১০৯, ঢাকামেট্রো-ড ১৪-০৮৯৬, লট নং- ৫০।
স্থানীয়রা জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় বিজিবি সদস্যরা ট্রাকগুলো আটক করলে ড্রাইভার ও পাথরের মালিকরা গাড়িগুলো রাস্তায় পেলে পালিয়ে যায়। এতে ওই এলাকার জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা আরো বলেন, প্রতিরাতে শতশত ট্রাক পাথর পাচার হচ্ছে।
বনপুর ত্রিশডেবা বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার মুমিরুল হক জানান, আটক ৯ ট্রাক পাথরের বিষয়ে কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। অবৈধ পাথরের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন মামলা নিতে অনিহা প্রকাশ করছে। রবিবার লামা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সায়েদ ইকবাল ঘটনাস্থলে এসে পাথর জব্দ দেখিয়ে ট্রাকগুলো ছেড়ে দিতে চাইলে আমরা বাধা প্রদান করি। পাথর জব্দ দেখিয়ে ট্রাকগুলো ছেড়ে দেওয়া মানে সুকৌশলে পাথর ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার শামিল। তাছাড়া জব্দ ও নিলামের কাগজ দেখিয়ে পাথর ব্যবসায়ীরা শতগুণ পাথর রাতের আঁধানে নিয়ে যায়।
ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, কোন ঝিরি ছড়াতে ভাসমান পাথর নেই। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গত ৬/৭ বছর ধরে মাটি খুঁড়ে ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করছে। আমাদের বাধা প্রশাসনসহ কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা।
সরকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সায়েদ ইকবাল বলেন, পাথরগুলো বিজিবি আটক করেছে। আমাদের কিছু করার নেই।
নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম বলেন, রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সম্পদ রক্ষায়ও কাজ করে বিজিবি। অবৈধ পাথর পাচার হলে এবং তা হতে রাষ্ট্র রাজস্ব হারালে সেখানে অবশ্যই বিজিবি হস্তক্ষেপ করবে। আটক ৯ ট্রাক অবৈধ পাথর ও ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ৯ ট্রাক পাথর আটকের বিষয়ে বিজিবি থেকে আমাকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় পাহাড়ি বাঙ্গালীদের কাছ থেকে জানা যায় ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৯নং ওয়ার্ডের ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরা ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি, কাঁঠালছড়া ও বদুর ঝিরি থেকে প্রতিরাতে শতশত গাড়ি পাথর পাচার হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। পাথর পাচারে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালর্ভাট ভেঙ্গে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।
বিডি প্রতিদিন/৫ মার্চ ২০১৮/হিমেল