১৮ বছর ধরে স্কুলের নৈশপ্রহরীর চাকরি করেও বেতন জোটেনি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল গ্রামের আবুল হাসেমের। সংসার, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও বিয়ে-সাদির খরচ যোগাতে গিয়ে এনজিও এবং স্থানীয় বিভিন্ন সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা ভারি হতে থাকে আবুল হাসেমের।
বয়সের ভার এবং শারীরিক অসুস্থতায় মাঠে কাজকর্ম করতে পারতেন না তিনি। কিন্তু বসে নেই পাওনাদাররা। ঋণ পরিশোধে তার ওপর চাপ দিনদিন বাড়তেই থাকে। কিন্তু পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য আর শক্তিও ছিল না। সামান্য বসতভিটাটুকু ছাড়া তার মাঠে কোন জমিজমা ছিল না। ফলে বাড়তে থাকে মানসিক জ্বালা। আর সে জ্বালাটুকু মেটালেন অবশেষে গলায় ফাঁস দিয়ে।
বুধবার রাতে নিজের কর্মস্থল পিপরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন এ নৈশপ্রহরী। আজ সকালে স্বজনরা স্কুলের জানালা দিয়ে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নৈশপ্রহরী আবুল হাসেম উপজেলার পিপরুল গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পিপরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো রাতে খাবার শেষে বাড়ির পাশে কর্মস্থলে যান আবুল হাশেম। সকালে স্বজনরা তাকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে স্কুলের জানালা দিয়ে অফিস কক্ষে তার মরদেহ ঝুলতে দেখে প্রতিবেশীসহ পুলিশে খবর দেন।
নৈশপ্রহরী আবুল হাসেমের ছোট ভাই আব্দুর রাজ্জাক জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল না। তবে বিপুল পরিমাণ টাকা তার ঋণ ছিল। বিভিন্ন এনজিও, সমিতি থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। পাওনা টাকার জন্য প্রায় মানুষজন তাকে চাপ দিতেন। এ নিয়ে সব সময় মানসিক চাপে থাকতেন। তাদের দাবি, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তিনি আত্নহত্যা করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তিনি নৈশপ্রহরী হিসেবে তার স্কুলে চাকরি করছেন। কিন্তু বেতন পান না। সংসারের খরচ আর ছেলে-মেয়ে মানুষ করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ হয়েছিল তার। মাঝে মধ্যে পাওনাদাররা স্কুলে আসতেন তার সন্ধানে। এসব বিষয় নিয়ে খুব হতাশায় থাকতেন তিনি।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত-ওসি) উজ্জ্বল হোসেন জানান, নৈশপ্রহরী আবুল হাসেম আত্নহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়ে এখনও বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার