গফরগাঁওয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা করা স্কুলছাত্র রিয়াদের (১৪) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কিছুক্ষণ পরপরই হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠছেন নিষ্ঠুরতার কাছে হার মেনে বিদায় নেয়া শিক্ষার্থী রিয়াদের মা মাবিয়া খাতুন। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে বুক চাপড়িয়ে ডুকড়ে কাঁদছেন। মাঝে মাঝে ‘ও মাহ ও মাহ’ বলে ছোট ছোট আওয়াজ করছে আর মূর্ছা যাচ্ছেন। কথা বলতে না পারলেও তার মুখের অভিব্যক্তি, শোক, আবেগ, ক্রোধ সব কিছুরই প্রকাশ তার এমন বিলাপে। পরিবারের অভিযোগ, রিয়াদকে মুমূর্ষু অবস্থায় পিপাসা মেটাতে এক ফোটা পানি পর্যন্ত দেয়নি পাষণ্ড হত্যাকারীরা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় শিশু রিয়াদ হত্যার ঘটনাস্থল উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের ঘাগড়া টাওয়ার মোড় বাজার সুনশান নীরব। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনার সাথে জড়িত ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামি করে নিহত রিয়াদের ফুফা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে গফরগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় সন্দেহভাজন কাজিম উদ্দিন (৬৪) নামের একজনকে ইতিমধ্যে পুলিশ আটক করেছে। শুক্রবার বিকেলে তাকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
গফরগাঁও থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানান, প্রধান আসামি রাশিদ, কামরুল, সিরাজ, মীর রাসেলসহ অন্যান্য আসামিদের ধরতে জোরালে অভিযান চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ঘাগড়া গ্রামের নাসিমা (৫০) জানান, পানির জন্য নিহত রিয়াদের কান্নায় এক গ্লাস পানি নিয়ে গেলেও নির্যাতনকারীরা দা-লাঠি উচিয়ে ভয় দেখালে তিনি আর পানি খাওয়াতে পারেননি।
রিয়াদের কলেজ পড়ুয়া বোন নীলফুল নাহার শান্তা জানায়, রিয়াদেরও কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিল। সে মাঝে মধ্যে ভোর বেলায় কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত আবার ফিরে আসত। বৃহস্পতিবার সকালে ছোট ভাইকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের খবর পেয়ে তাকে বাঁচাতে মা-দাদী, ভাইসহ নির্যাতনকারীদের কাছে গিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তারা নির্যাতন বন্ধ করেনি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের উথুরী-ঘাগড়া টাওয়ারের মোড় বাজারের কাছে হত্যা করা হয় রিয়াদকে। এর আগে কিশোর রিয়াদকে আটক করা হয় ভোর পাঁচটার পরে। আর নির্যাতন চলে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। সকাল সাতটার দিকে রিয়াদের মৃত্যুর পর ক্ষান্ত দেয় নির্যাতনকারীরা। এরপর কেবল ঘটনাস্থল নয়, এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা। রিয়াদ স্থানীয় ঘাগড়া-উথুরী-ছিপান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। সে উথুরী গ্রামের সৌদি প্রবাসী সাইদুর রহমান শাহীনের ছেলে।
বিডি প্রতিদিন/৩১ আগষ্ট ২০১৮/হিমেল