বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন লুৎফর রহমান সড়কের ভাড়া বাসা থেকে ইউনিয়ন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা এক নারীর রক্তাত্ব লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয়দের দেওয়া সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর বিমান বন্দর থানা পুলিশ মারুফা বেগম (৪১) নামে ওই নারী কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করে।
ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হতে পারে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পুলিশ বলছে, ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া ধর্ষণের ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশ।
নিহত মারুফা বেগম নগরীর কাশীপুর গণপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী এবং কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। স্বামী জহিরুল হায়দায় চৌধুরী ঢাকায় প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত।
নিঃসন্তান মারুফা নথুল্লাবাদ লুৎফর রহমান সড়কের জনৈক সুলতান আহমেদের মালিকানাধীন ‘শরীফ মঞ্জিলের’ তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে একা ভাড়া থাকতেন। গতকাল শনিবার রাতে বাড়ির মালিকের সাথে গল্প করে ঘুমাতে যায় মারুফা।
আজ রবিবার সকালে ঢাকায় অবস্থানরত জহিরুল হায়দার চৌধুরী তার স্ত্রীর মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দিলেও ফোন রিসিভ করেননি মারুফা। পরে জহিরুল বাড়ির মালিকের কাছে ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর অবস্থান এবং ফোন রিসিভ না করার কারন জানতে চান। বাড়ির মালিক ওই ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে মারুফার ফ্ল্যাট ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পেয়ে এবং ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বিষয়টি জহিরুল চৌধুরীকে জানান। জহিরুল তার বড় ভাইকে খোঁজ নেওয়ার জন্য তার বাসায় পাঠান। বড় ভাই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেতর থেকে বাসার দরজা আটকানো দেখে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানান।
পরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলিশে খবর দিলে বিমান বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেন।
লাশ উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা প্রথমে বাসার ভেতরে ঢুকে বিছানার উপর মারুফার বিবস্ত্র রক্তাত্ব লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে নারী পুলিশ সদস্যদের দিয়ে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করেন। লাশের কানের নিচে এবং বাহুতে রক্তাত্ব জখমের চিহ্ন রয়েছে।
নিহতের সহকর্মীরা জানান, গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত অফিস করেছেন মারুফা বেগম। গতকাল মাসের শেষ দিন হওয়ায় রিপোর্ট করতে হবে, তাই মারুফা বেগমকে প্রয়োজন। সকাল থেকে অফিসে না যাওয়ায় তারাও তার মুঠোফোনে রিং দিয়ে না পেয়ে বাসায় গিয়ে দেখতে পান মারুফা নিহত হয়েছে।
মারুফার সাথে ওই অফিসের কারোর পরকীয় প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং ওই সম্পর্কের জের ধরেই সে খুন হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিস্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র। তবে নিহত মারুফার কোন অনৈতিক খবর সহকর্মীরা জানেন না এবং তিনি ভালো মানুষ ছিলো বলে দাবি তাদের।
মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) জাহাঙ্গীর মল্লিক জানান, মারুফার কানের পাশে এবং শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার বাসার দরজা ভেঙ্গে মারুফার রক্তাত্ব লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল শেষে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আলামত দেখে মারুফা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। এই হত্যার ঘটনায় তথ্য উদঘাটনসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ৪ সহকর্মীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর মল্লিক।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ অভিযুক্তদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার