ঝিনাইদহে রাস্তাবিহীন খালে ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি ব্রীজ নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজটি কার্যত দুই ইউনিয়নবাসীর কোনো কাজেই আসছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গাছা কুতুবপুর গ্রামের সিরিষকাঠ খালে ২০১৫/১৬ অর্থ বছরে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
স্থানীয় গ্রামবাসী গোলাপ মণ্ডল জানান, সিরিষকাঠ খালটি মহারাজপুর ও কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। মহারাজপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রাম পার হয়ে ডেফলবাড়িয়া গ্রামে আসতে সিরিষকাঠ খালটি পড়ে। নির্মিত ব্রীজ ও খালের ১০০ গজ পূর্ব দিকে আব্দুলের বাড়ির কাছে রাস্তাটি শেষ হয়েছে। এরপর রেকর্ডে আর কোনো রাস্তা নেই।
ডেফলবাড়ি গ্রামের যে অংশে ব্রীজটি শেষ হয়েছে সেখানে একটি পুকুর ও বাঁশ বাগান। কোনো রাস্তার চিহ্ন নেই। অথচ রাস্তাবিহীন স্থানে একটি ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে ব্রীজ করা হয়েছে বলে গোলাপ মণ্ডলে অভিযোগ।
ডেফলবাড়ি গ্রামের তোতালেব মণ্ডল অভিযোগ করেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গায়ের জোরে এই ব্রীজ করেছেন, যা এখন কোনো কাজেই আসছে না। তিনি বলেন, রাস্তা বের করতে হলে তাদের মালিকানাধীন পুকুর ভরাট করতে হবে। অনেক গাছপালা ও কবরস্থান সরাতে হবে। কিন্তু তারা রাস্তার জন্য জমি দিবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ছানারুদ্দীন জানান, ব্রীজের মাথায় তাদের ৫ শরীকের ৩৫ শতক জমি আছে। সেখানে বাড়ি-ঘর ও কবরস্থান রয়েছে। রাস্তার জন্য জমি দিলে তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙতে হবে। কিন্তু তাদের বসবাসের আর কোন জায়গা নেই।
বিষয়টি নিয়ে মহারাজপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বর জালাল উদ্দীন জানান, ব্রীজটি নির্মাণের ফলে মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। অথচ যেখানে ব্রীজ করা দরকার সেখানে করা হয়নি। এটা একটা ভুল পরিকল্পনা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মহারাজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বকর বলেন, ব্রীজের পশ্চিম দিক দিয়ে রাস্তা করার জন্য তিনি স্থানীয় এমপির কাছে বরাদ্দ চেয়েছিলেন। তিনি দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি আর চেয়ারম্যান হতে পারেননি বলে কাজটি থেমে গেছে।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান জানান, প্রথমে আমরা ব্রীজ নির্মাণের প্রস্তাবটি বাতিল করে দিই। কিন্তু সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকরের রাস্তা করার প্রতিশ্রুতি পেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে নতুন করে প্রকল্প পাঠিয়ে ব্রীজটি করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মি ইসলাম জানান, যখন ব্রীজটি নির্মিত হয়, তখন আমি ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন