একমাত্র ছেলেকে বিয়ে দিয়ে নববধূ ঘরে আনবে। বছর ঘুরে নাতি-নাতনির মুখ দেখবে। নাতি-নাতনিদের সাথে হেসে খেলে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবে। এমন স্বপ্ন নিয়েই সিরাজগঞ্জ শহরের কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন ও স্ত্রী ঝর্না বেগম নিজেদের পছন্দের মেয়ের সাথে ছেলেকে বিয়ে করান। কিন্তু বিয়ের পড়ানোর এক ঘন্টা পরে নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে বেদনায় পরিণত হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় উল্লাপাড়ায় ট্রেনের সাথে মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহত রাজনের বাবা-মা আবেগআপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন আর শোকে কাঁদছিলেন। শুধু তার ছেলে আর নববধূই নয়; দুর্ঘটনায় তাদের সাথে আরো নয়জন মারা যায়। একমাত্র ছেলের বিয়েতে এসে নয় স্বজনের মৃত্যু- শোককে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের। শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তারা। কিছুতেই এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তারা। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ সদরের উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন বাড়ি গেলে সদ্য বিবাহিত বর রাজন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিস্তব্ধ এক শোকাবহ পরিবেশ। চোখের পানি ঠেকাতে পারছেন না দুর-দুরান্ত থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ। শান্তনা দেয়ার ভাষা নেই কারও কাছেই।
নিহতের রাজনের স্বজন অনিক, এনামুল ও বোন রুপা জানান, এক সপ্তাহ আগে উল্লাপাড়া পৌর শহরের এনায়েতপুর গুচ্ছ গ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের (২১) সঙ্গে ভাইয়ের বিয়ের জন্য সোমবার দিনক্ষণ ঠিক হয়। সে মোতাবেক ভাই ও আত্মীয়স্বজন মিলে দুটো মাইক্রোবাস নিয়ে কনের বাড়িতে যাই। যথারীতি উৎসবমুখর পরিবেশে বর-কনে কবুল পাঠ করে একে অপরকে জীবনসঙ্গী (স্বামী-স্ত্রী) করে গ্রহণ করে নেন। পৌনে ৭টার দিকে বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দেয়া হয় নববধূ নিয়ে রওনা দেয়া হয়েছে। রাজন ও সুমাইয়ার জন্য বাসরঘর সাজানো হয়েছিল। নতুন জীবন শুরুর স্বপ্নে বিভোর ছিল দুজন। কিন্তু ভাই-ভাবীর সেই স্বপ্ন আর পূরণ করতে দিল না একটি দুর্ঘটনা। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় শুধু নব-দম্পত্তিই নয় তাদের আরো নয়জনের তরতাজা প্রাণ হারায়।আজ মঙ্গলবার সকালে নিহতের স্বজনদের কোন অভিযোগ না থাকায় সকালে জিআরপি পুলিশ লাশগুলো পরিবারের লোকের কাছে হস্তান্তর করেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার থেকে দুপুর (বাদযোহর) পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ পৌর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ, রামগাঁতি, কালিয়া হরিপুর, সয়াধানগড়া, দিয়ার ধানগড়া ঈদগাহ ও এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের ঘাটিনা ঈদগাহ মাঠ ও রায়গঞ্জের উপজেলার কৃষ্ণদিয়ার গ্রামে পৃথক জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক