১৯ জুলাই, ২০১৯ ১৭:৫৩

পানি কমতে শুরু করলেও গাইবান্ধায় বন্যার ভয়াবহতা কমেনি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

পানি কমতে শুরু করলেও গাইবান্ধায় বন্যার ভয়াবহতা কমেনি

ডা. মো.এনামুর রহমান, হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি ও এনামুল হক শামীম

এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি বাড়তে থাকলেও গত চব্বিশ ঘণ্টায় তা কমতে শুরু করেছে। তবে জেলা সদরসহ পাঁচ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা কমেনি। 

জেলার ছয়টি উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়নের ২৫৩টি গ্রাম পানিতে ডুবে রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মুন্নি আক্তার নামে ৯ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে শুক্রবার গাইবান্ধা আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬ সেন্টিমিটার কমলেও তা বিপদসীমার ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ঘাঘটের পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে শুক্রবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে রংপুর চিনিকলের পাশের খালে গোসল করতে নেমে বন্যার পানির স্রোতে ডুবে মুন্নি আক্তার নামে ৯ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার মনু মিয়ার মেয়ে বলে জানিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান।

গ্রামাঞ্চল ছাড়িয়ে এখন গাইবান্ধা জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে। জেলা শহরের যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন সেখানেও পানি উঠে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। 

গাইবান্ধা পৌর এলাকায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল কলেজ, প্রধান কাঁচাবাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উঠে পড়ায় বন্ধ করতে হয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে পৌর কবরস্থান। দিন হাজিরার বিনিময়ে কাজ করা শ্রমিকরা কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন। 

এদিকে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রেল লাইনে পানি উঠে পড়ায় গত তিন দিন থেকে গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া স্টেশনে বন্ধ আছে রেল যোগাযোগ।

বন্যা পীড়িত মানুষের মধ্যে যারা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তারা জানান বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার এবং স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা। বাঁধে আশ্রিতরা খাদ্য, পানি এবং পশু খাদ্যের অভাবের কথা জানিয়েছেন। 

এদিকে বন্যা আক্রান্ত এলাকা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দেখতে শুক্রবার গাইবান্ধা আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো.এনামুর রহমান ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। 

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যোগ দিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, গাইবান্ধাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উঁচু ও প্রশস্তকরণের কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে। 

অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ত্রাণের জন্য গাইবান্ধায় নগদ ১৫ লাখ টাকা, এক হাজার ১শ মেট্রিক টন চাল, শুকনা খাবার, টিন ও তাঁবু পাঠানো হয়েছে। ত্রাণের কোন অভাব হবে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এরপর তারা ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুরে ত্রাণ বিতরণের জন্য রওনা দেন।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর