তুচ্ছ ঘটনায় প্রকাশ্যে এক নারী আইনজীবীকে মারধোর করার ঘটনায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্’র বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই আইনজীবী।
আজ শুক্রবার সকালে আইনগত ব্যবস্থা চেয়ে গলাচিপা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আইনজীবী উম্মে আসমা আখিঁ। শুধু তাই নয়, ঘটনার সময় উপস্থিত লোকের সামনে প্রকাশ্যে ওই নারী আইনজীবীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন চেয়ারম্যান। এছাড়াও ওই নারীর শ্বশুর কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে গালাগাল ও পায়ের রগ কর্তন এবং পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন ওই উপজেলা চেয়ারম্যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে ইউপি চেয়ারম্যানের পুত্রবধূ আইনজীবী উম্মে আসমা আখিকে জনসম্মুখে চর-থাপ্পর আর লাথি মারেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় প্রতিকার চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক তার বসতবাড়ীতে হামলার আশঙ্কা এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে গলাচিপা থানায় সাধারন ডায়েরী করেছেন ওই নারী আইনজীবীর শ্বশুর উপজেলার ৯নং কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দুলাল চৌধূরী।
থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে আখি উল্লেখ করেন, বিবাদী একজন খারাপ বখাটে প্রকৃতির লোক। গত ১২ সেপ্টেম্বর শাহিন শাহ্ আমার শ্বশুর ২নং সাক্ষীকে গ্রামের মাছের ঘেরের মাছ মরার বিষয় নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। একই তারিখ দুপুর সোয়া দুইটার দিকে আমি গলাচিপা উপজেলা পরিষদের সামনে গেলে উক্ত বিবাদীকে দেখতে পেয়ে আমার শ্বশুরকে গালমন্দ করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিবাদী ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং এক পর্যায়ে আমাকে এলোপাথারী কিলঘুষি ও তলপেটে লাথি মেরে আহত করে। আমার ডাক চিৎকারে স্বাক্ষীরাসহ আশপাশের লোকজন আসলে উক্ত বিবাদী আমাকেসহ আমার পরিবারের লোকজনদের রাস্তাঘাটে পেলে ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে, এমনকি মারাত্মক অস্ত্র দিয়া খুনের হুমকি প্রদান করে।
আইনজীবী উম্মে সালমা আখি জানান, ঘেরের মাছ মরার বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আমার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্ যেভাবে আচরন করেছে তা সভ্য মানুষের কাজ নয়। ঘটনার জন্য আইনী ব্যাবস্থা চেয়ে গলাচিপা থানায় তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, তিনি শারিরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন নিজ জেলার বাইরে ছিলেন। বুধবার তিনি গলাচিপা উপজেলার বাসায় আসেন। বৃহস্পতিবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্ কল করে তাকে উপজেলা চত্বরে যেতে বলে। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ জানিয়ে উপজেলা চত্বরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে মোবাইলে। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় তাকে গালমমন্দ করে। এসময় তিনি এর প্রতিবাদ করলে শাহিন শাহ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পায়ের রগ কাটা এবং পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমখী দেয় তাকে। এক পর্যায় তিনি (ইউপি চেয়ারম্যান) ফোনের লাইনটি কেটে দেয়।
এ ঘটনা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে জানালে তাকে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানায় দুলাল চৌধুরী। তিনি জানান, আমার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক আমার বসতবাড়ীতে হামলার কথা উল্লেখ করে আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
গলাচিপা থানার এসআই মো. হুমায়ুন কবির বলেন, উম্মে আসমা আখি সকালে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
গলাচিপা থানার ওসি আখতার মোর্শেদ বলেন, নিরাপত্তা চেয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইল ফোনে তাকে হুমকি দিয়েছেন এবং তার বসতবাড়ীতে হামলার আশংকা করছেন বলে তিনি জিডিতে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগটি আদালতের মাধ্যমে মোবাইলের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে আইনী প্রক্রিয়ায় তদন্ত করা হবে।
গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন শাহ্ তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি ও অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে বলেন, এটা হলো মাছ মারার ঘটনা। ওই ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য এগুলো নাটক সাজিয়েছে। তাকে কে মারবে বলেন, তার বাসায় কে হামলা করবে, এটা নাটক।
বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ