দেশের সর্বোত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। প্রভাবশালীদের দ্বৈত ভূমিকা এবং এক শ্রেণির দালালের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে সাধারন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। গত দুইমাসে মাসে অন্তত: ২০টি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে এই জেলায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। অহরহ ঘটছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শুরু থেকে গত ৯ মাসে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হয়েছে ৫৯৪টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৯৩টি। বিচারাধীন রয়েছে ৪৮১টি মামলা। শিশু জুভেনাইল মামলা হয়েছে ১৭৯টা। নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩টি।১৫৬ টি মামলা বিচারাধীন।
তবে আদালতে বিচার কার্যক্রম দ্রুত গতিতেই সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানালেন পঞ্চগড় জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব ঘটনা বাড়লেও বিচার প্রক্রিয়া যথাযথভাবেই চলছে।
অন্যদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জেলার পাঁচ থানার মধ্যে সদর থানায় ৫৯, দেবীগঞ্জ থানায় ৩৩, বোদা থানায় ৩২, তেঁতুলিয়ায় ১৮,এবং আটোয়ালী থানায় ৩৪টিসহ মোট ১৭৬টি এ ধরনের মামলা হয়েছে।
অনেক ঘটনায় থানা এবং আদালতে মামলা হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে এবং মীমাংসার জন্য দালালদের অবৈধ তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত মামলা তুলে নিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কাউকে আইনের দুয়ারেই যেতে দেয়া হচ্ছে না। তারা আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে মীমাংসার নাম করে আসল ঘটনা চাপিয়ে রাখছেন। মীমাংসার জন্য বিচার প্রার্থীদের হুমকিও দিচ্ছেন এই দালাল চক্র।
পঞ্চগড় পৌরসভার রামের ডাঙ্গা এলাকার একজন নারী ভুক্তভোগী জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে কয়েকবছর ধরে ধর্ষণ করা হয়। পরে বিয়ের কথা বললে ছেলে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আমি সদর থানায় মামলা করি। এখন প্রতিদিন মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল চক্র।
জেলার বিশিষ্ট নাগরিকরা উদ্যোগ প্রকাশ করে বলছেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েরা এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বেশি। দায়ের করা মামলাগুলো এলাকার প্রভাবশালীদের চাপে আপস মীমাংসার নামে অর্থের বিনিময়ে মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে। এসব ঘটনা নিরসনে তারা সরকারি বেসরকারি নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন সরকার জানান, এখন যে ঘটনাগুলো চোখে দেখছি তা ভয়ঙ্কর। আগে এমন কিছু দেখিনি। দালালদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
নারী শিশু নির্যাতন ও হত্যা মামলার মীমাংসার কোন আইন নেই বলে জানিয়েছেন পুলিস সুপার ইউসুফ আলী। এসব ঘনটা ঘটলে দ্রুত পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা