২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০২:৩৮

ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবায় ভোগান্তি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবায় ভোগান্তি

ঠাকুরগাঁওয়ের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর তথ্য সেবা কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকলেও মেরামতে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ে ফিরে যাচ্ছে অনেকে। আর প্রশাসন বলছে, তথ্য সেবায় ভোগান্তি এড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে ই-সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে খোলা হয় ই-তথ্য সেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে এসে ফটোকপি, জন্ম-মৃত্যু সনদ, জমির পর্চা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ অনলাইনে সবরকম কাজের সুবিধা পেত। কিন্তু বর্তমানে সেবা কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুযোগ সুবিধার অভাবে সদরের জেলা সদরের বেগুনবাড়ি, আকঁচা, রহিমানপুর, বড়গাঁ, সুখানপুখুরি, রুহিয়া, আখানগড়, জামালপুর ও গড়েয়া ইউনিয়নের উদ্যোক্তারা সময়মত না আসায় মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকছে সেবা কেন্দ্র। ফলে সাধারণ মানুষ ঘণ্টা পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সেবা না পেয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে অনত্র গিয়ে ই-সেবার কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার কারণে কাজ কমে যাওয়ায় উদ্যোক্তারাও কাজে আসতে অনিহা প্রকাশ করছেন। 

পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট, বৈরচুনা, হরিপুরের গেদুরা, লেহেম্বা, সদরের বেগুনবাড়ি, আখানগড় ইউনিয়ন প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় এখানকার মানুষের জন্য অনলাইন সেবা প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার স্থানীয় এলাকাবাসী কাইয়ুম, বজলার, রশিদ, হেমন্তসহ অনেকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা চালু করায় সাধারণ মানুষ এখান থেকে সেবা নিত। কিন্তু বর্তমানে এসব ইউনিয়নে সেবা নিতে গেলে একটা কাজ হলে আরেকটা হয় না। ফলে সব কাজ এক সাথে করতে উপজেলা ও জেলা শহরে যেতে হয়। এতে করে সময় ও আর্থিক খরচ বেড়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা মনে করি সরকার এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিবে।    

আকঁচা, আখানগড়, রহিমানপুর, রুহিয়া ও বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের উদ্যোক্তা সোহেল রানা, ফারুক হোসেন, নরেশ চন্দ্র, আমিরুল ইসলাম জানান, ২০১০ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ই-তথ্য সেবার কাজ শুরু হয়। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে কম্পিউটার, স্কেন মেশিন, ফটোকপি, প্রিন্টারসহ প্রদান করা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। যা দেখা শোনার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কথা ছিল টুকিটাকি জিনিসপত্র নষ্ট হলে আয়কৃত টাকা থেকে তা ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বেতনও নিতে হবে আয়কৃত টাকা থেকেই। আর একটি ইউনিয়নে ২জন করে উদ্যোক্তা কাজ করতো। শুরুর দিকে গড়ে ৭-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হতো। এছাড়া কোনো কোনো মাসে বিদেশে কর্মস্থানের সুযোগ সরকারিভাবে প্রকল্প অনলাইনে ফরম পূরণ করা কাজে আয় হতো মাসে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সব সময় এসব প্রকল্পের কাজ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয় না। যদি নিয়মিত এ ধরনের কাজ হতো তাহলে টাকার অভাবে নষ্ট হওয়া জিনিসিপত্র পড়ে থাকতো না। আমরাও আয় করতে পারতাম মানুষও সেবা পেতেন। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলে ছোট খাটো ত্রুটি থেকে বড় বড় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যন্ত্রপাতিতে। ফলে বিশেষ করে শতকরা ৮০ ভাগ ফটোকপি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্রও নষ্টের পথে। এজন্যই অনেক উদ্যোক্তা সময়মত কেন্দ্রে আসেন না। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলার পরও মেরামতে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে সুবিধা উদ্যোক্তাদের বেতন ও নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিলে সফলতা আসবে। 

সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন জানান, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে প্রকল্প নিয়ে নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামতের। কিন্তু হঠাৎ করে যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে তা মেরামত করা সম্ভব হয় না। কাঙ্খিত সেবা দিতে হলে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। তা না হলে সেবা কেন্দ্রটি থেকে কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়।
 
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ভারপ্রাপ্ত মো. নুর কুতুবুল আলম ই-সেবায় ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যে সকল ইউনিয়নে লাইন যায়নি তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
 
স্থানীয় সরকার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৫৩ টি ইউয়নিয়ের মধ্যে ঢোলারহাট, বৈরচুনা, ডাঙ্গীপাড়া ও গেদুড়াসহ ৯টি ইউনিয়নে নেই ইন্টারনেট সংযোগ। ফটোকপি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ১৩টি ইউনিয়নে। এছাড়া প্রিন্টার ও স্কিনার মেশিনের সমস্যা রয়েছে ২৬টি ইউনিয়নের।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর