৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১১:৩৪

যার যায় সেই বুঝে, আমি আমার সর্বস্ব হারিয়েছি: রুম্পার বাবা

অনলাইন প্রতিবেদক

যার যায় সেই বুঝে, আমি আমার সর্বস্ব হারিয়েছি: রুম্পার বাবা

রুম্পার কবরের পাশে মায়ের আর্তনাদ।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে দুই বাড়ির মাঝ থেকে উদ্ধার নিহত রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বাবা-মা দু’জনই এখন শোকে বিহ্বল। বাবা রুকন উদ্দিন নিজেকে সামলে নিতে পারছেন না কোনো ভাবেই। বার বার ছুটে যাচ্ছেন মেয়ের কবরের পাশে। সেখানে বসে অঝোরে কাঁদছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, যার যায় সেই বুঝে। আমি মেয়ে হারাইনি, আমি আমার সর্বস্ব হারিয়েছি। কত কষ্ট করে মেয়েকে লালন-পালন করে বড় করেছি। সামনে কত সুন্দর ভবিষ্যৎ পড়েছিল তার। অথচ তার আগেই মেয়েকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো।

এদিকে, মেয়ের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাহিদা আক্তার পারুল। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিয়েও কান্না থামাতে পারছেন না। দুদিন ধরে কিছুই খাননি। শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েন। অপরাধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'তোরা এত্ত খারাপ’ তোদের মনে মায়া দয়া নেই। তোরা কোনো মায়ের পেট থেকে পড়িসনি, তোদের বিচার যেন দেইখ্যা যাইতে পারি।'

রুম্পার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। রুম্পার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। তারা বলছেন, অপরাধীদের দ্রুত সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

জানা গেছে, রুম্পার বাবা মো. রুককুন উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। মা নাহিদা আক্তার পারুল গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের রুম্পা সবার বড়। রুম্পা ২০১৪ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৬ সালে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

তিনি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ছোট ভাই আশরাফুল আলম রাজধানীর ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত।

রাজধানী ঢাকার শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতেন রুম্পা ও তার ছোট ভাই। পড়াশোনার পাশাপাশি রুম্পা টিউশনি করাতেন। গত বুধবার টিউশনি শেষে বাসায় ফেরার পর রুম্পা। এরপর বাইরে কাজ আছে বলে আবার বাসা থেকে বের হন। কিন্তু এরপর রাতে আর বাসায় ফিরেননি। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি।

বুধবার রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে দুই বাড়ির মাঝ থেকে উদ্ধার করা হয় রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা (২১)-এর মরদেহ। তার মৃত্যু নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি।

শুক্রবার রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন আছে। এগুলোর যেকোনও একটা থেকে পড়ে রুম্পা মারা গেছেন। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, মামলা তদন্তাধীন। 

ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, উপর থেকে পড়েই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে তার মৃতদেহ থেকে হাইভেজেনাল সপসহ ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। সেই রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর