পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যোগ দিতে পারবে অন্য দেশও।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, পাকিস্তান-সৌদির মধ্যে হওয়া ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অন্য আরব দেশগুলোসহ যেকোনও দেশের যোগদানের সুযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি এটিকে সামরিক জোট ন্যাটোর মতো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে হওয়া পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অন্য আরব দেশগুলোর যোগদানের সুযোগ খোলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “এই দরজা বন্ধ হয়নি।”
এর আগে গত বুধবার রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ঐতিহাসিক এই ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’-তে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনও এক দেশের ওপর আগ্রাসন মানেই উভয় দেশের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।
জিও নিউজের ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফকে জিজ্ঞেস করা হয়, অন্য আরব দেশগুলো কি এই চুক্তিতে যোগ দিতে পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, “এখনই চূড়ান্ত কিছু বলতে পারছি না, তবে আমি নিশ্চিত করে বলব— দরজা খোলা আছে।”
আসিফ বলেন, গত ৪০-৫০ বছরের আঞ্চলিক ইতিহাস বিবেচনায় পাকিস্তানের জন্য ন্যাটোর মতো একটি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা সবসময়ই ছিল। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি এখানে থাকা দেশ ও জনগণের, বিশেষ করে মুসলিম জনসংখ্যার মৌলিক অধিকার হলো সম্মিলিতভাবে নিজেদের অঞ্চল ও জাতিকে রক্ষা করা।”
তিনি জানান, এই চুক্তিতে কোথাও বলা হয়নি যে অন্য কোনও দেশ যোগ দিতে পারবে না কিংবা পাকিস্তান অন্য কোনও দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করতে পারবে না।
চুক্তিতে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতাও ব্যবহার হতে পারে কি না— এমন প্রশ্নে আসিফ বলেন, “আমাদের যা আছে, আমাদের সক্ষমতা— তা অবশ্যই এই চুক্তির আওতায় থাকবে। তবে এটাও বলব, পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার পর থেকে কখনও আমাদের দায়িত্বশীল অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।”
তিনি বলেন, পাকিস্তান সবসময় তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে এবং কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করেনি। বিপরীতে ইসরায়েল কখনওই কোনও পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি।
পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, এক দেশের ওপর হামলা হলে অন্য দেশ সরাসরি জড়িত হবে— এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি আরও বলেন, চুক্তিটি কোনও নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে নয় এবং এটি কোনও আগ্রাসী চুক্তিও নয়। বরং এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা, অনেকটা ন্যাটোর মতো।
আসিফ উল্লেখ করেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। তাই এই নতুন উদ্যোগ মূলত পূর্ববর্তী সহযোগিতারই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। তিনি বলেন, “যদি সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হয়, আমরা যৌথভাবে তা প্রতিরোধ করব।”
আসিফ স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তানের বহু দশক ধরে সৌদিতে সেনা ও বিমানবাহিনীর একটি বড় কনটিনজেন্ট অবস্থান করছে। তার মতে, এই সম্পর্ক এখন আরও স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হলো এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে নতুন মাত্রা পেল।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে ইসলামী পবিত্র স্থানগুলোর সুরক্ষা পাকিস্তানের কাছে এক ‘পবিত্র দায়িত্ব’।
চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে আসিফ বলেন, “এখানে অন্য কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা বা ন্যায্যতা নেই। এই চুক্তি কোনও আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা নয়, এটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। আমরা কোন ভূখণ্ড দখল করতে বা আক্রমণ চালাতে চাই না। তবে আমাদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা যাবে না, আর আমরা সেটাই প্রয়োগ করেছি।”
তিনি বলেন, পাকিস্তান ভবিষ্যতে অন্য দেশের সঙ্গেও একই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে পারে। সূত্র: ডন নিউজ
বিডি প্রতিদিন/একেএ