৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৮:৫০

লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত হুমায়ূনের বাড়িতে শোকের মাতম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত হুমায়ূনের বাড়িতে শোকের মাতম

নারায়ণগঞ্জের সীমানাধীন চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছির (৩৮) গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। শনিবার সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ গ্রামে পৌঁছার পর স্বজনেরা বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রামভদ্রপুর গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বন্দুকছির ছেলে। 

আজ শনিবার ঢাকা থেকে এনে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

গ্রামবাসী ও নিহতর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়িচালক ছিলেন হুমায়ূন। তিনি ছিলেন নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা শোকে পাথর ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তার নাইম কবির (৬) নামে একটি ছেলে আছে। নাইম ৩নং রামভদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছয় বছরের ছেলে নাইমের মুখে অন্ন জোটাতেন তিনি। কিন্তু এই মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।

নিহত হুমায়ূনের স্ত্রী সিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শুক্রবার ছুটি ছিল তাই আমাদের দেখতে দুপুরে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। পরে রাতের লঞ্চে শরীয়তপুরের শুরেশ্বর থেকে ঢাকা সদরঘাট রওনা দেয়। রাত ১টার দিকে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার স্বামী নিহত হন। আমার ছেলে এত অল্প বয়সেই বাবা হারালেন! 

নিহত হুমায়ূনের চাচাতো ভাই ফারুক বন্দুকছি বলেন, আমি ঢাকা ছিলাম। মৃত্যুর কথা শুনে হুমায়ূন ভাইকে লঞ্চে উদ্ধার করতে যাই। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য আমি কোনো দিন দেখি নাই। তিনি শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী মানিক-৪ লঞ্চের দোতলার ফ্লোরে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আরেকটি লঞ্চের সাথে সংঘর্ষ হলে তার দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। শনিবার সকালে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে যায়। ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। 

হুমায়ূনের শ্বশুর নুর মোহাম্মদ চোকদার বলেন, আমার মেয়ে ও নাতিকে রেখে হুমায়ূনকে আল্লাহ নিয়ে গেছে। পরিবারটির জন্য সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাই। 

রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপ্লব সিকদার বলেন, আমি কীভাবে তাদের পরিবারকে সান্তনা দেব, সহযোগিতা করব, সে ভাষা আমার জানা নেই। তারপরও চেষ্টা করব তাদের পাশে থাকতে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ভেদরগঞ্জ ইউএনও'র মাধ্যমে শোকাহত পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকাহত পরিবারকে সহায়তা করা হবে। 

এদিকে, উপজেলার সখিপুর থানার চরভাগা এলাকার কৃষক ফজলুল হক ভূইয়া (৬৫) নামে একজন পা ভেঙে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সীমানাধীন চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী বোগদাদিয়া-১৩ ও শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী মানিক-৪ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে হুমায়ন কবির বন্দুকছি নিহত হয়েছেন। পরে শনিবার সকাল ৮টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত জন্য মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নেয়। এ ঘটনায় লঞ্চের অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর