১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৯:০১

আমি হুমায়ুন ধরলে কিন্তু কাউরে ছাড়ি না- এ বলে হুমকি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :

আমি হুমায়ুন ধরলে কিন্তু কাউরে ছাড়ি না- এ বলে হুমকি!

ইলেক্ট্রিশিয়ান মিলন

বরিশালে পরকীয়া প্রেমিকার বাসায় কলিং বেল লাগাতে দেরি হওয়ায় এক ইলেক্ট্রিশিয়ানকে মারধর করে মুখ ফাঁটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

ইলেক্ট্রিশিয়ান মিলনের অভিযোগ, পরকীয়া প্রেমিকার বাসায় কলিং বেল লাগাতে দেরি হওয়ায় তাকে গেট আটকে মারধর করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি হুমায়ুন সিকদার। এতে তার কপাল ফেঁটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। 

এ ঘটনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জানানোর অপরাধে আজ মঙ্গলবার সকালেও ফের দু’দফায় মিলনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ড সভাপতি হুমায়ুন ও তার পরকীয়া প্রেমিকার বিরুদ্ধে। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ইলেক্ট্রিশিয়ান মিলন বলেও সাংবাদিকদের জানান।

মিলন জানান, তিনি ১৩ নম্বর ওয়ার্ড খান সড়কের ডিস ব্যবসায়ী আসলাম খানের ডিস লাইনের কাজ করেন। মাঝে মধ্যে বাইরে ইলেক্ট্রিকের কাজ করেন। গত সোমবার সকালে খান সড়কের এক নারী তার বাসায় কলিং বেল লাগিয়ে দিতে বলেন। দিনভর ডিস লাইনের কাজে ব্যস্ত থাকায় বিকেলে ওই বাসায় কলিং বেল লাগাতে যান তিনি। এ সময় দেরি হওয়ায় ঐ নারী অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তাকে। এর প্রতিবাদ করলে ঐ নারী তাকে জুতা দিয়ে মারধর করে এবং মুঠোফোনে তার পরকীয়া প্রেমিক হুমায়ুনকে খবর দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে হুমায়ুন ওই বাসায় গিয়ে কলাপসিবল গেট আটকে মিলনকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি দিয়ে তার কপাল ফাঁটিয়ে দেয় এবং মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। 

ঘটনার দিন রাতেই বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ’র ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তফা জামান এবং আজ মঙ্গলবার মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা নিরব হোসেন টুটুলকে জানান। টুটুল এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয় হুমায়ুন ও তার পরকীয়া প্রেমিক।

মিলনের অভিযোগ, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে আবার রাস্তায় একা পেয়ে তার উপর চড়াও হয় ঐ নারী। স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান এবং আব্দুল কুদ্দুসের উপস্থিতিতে ঐ নারী বলেন- কারো কাছে নালিশ করে তার কিছুই করতে পারবে না। এর কিছুক্ষণ পর ওই সড়কের কাজী স্টোরের সামনে মিলনকে আবার একা পেয়ে নেতাদের কাছে নালিশ করার অভিযোগে ওয়ার্ড নেতা হুমায়ুন আঙুল উচিয়ে প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি হুমায়ুন কাউরে ধরলে কিন্তু ছাড়ি না।’ 

এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ইলেক্ট্রিশিয়ান মিলন। এদিকে, মারধর এবং দফায় দফায় হুমকি দেয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পুলিশ নিয়ে মিলনকে আবারও হেনস্তা করার চেষ্টা করে হুমায়ুন। পরে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলামের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিক রক্ষা পায় মিলন। 

অভিযুক্ত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন সিকদার বলেন, মিলন তারই লোক। তার নাম ভাঙিয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করে। গত সোমবার সে এক বাসায় ঝামেলা করে। ওই ঘটনায় তাকে মিলিয়ে দিতে গেলে মিলনকে দুটি চড়-থাপ্পর দেন তিনি। এ সময় পড়ে গিয়ে তার একটু কেটে গেছে। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি হুমায়ুনের। 

ইলেক্ট্রিশিয়ান মিলনকে মারধরের ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ওসি মো. নুরুল ইসলাম। স্থানীয়রা জানান, হুমকি দেওয়া ঐ নারীল সাথে হুমায়ুনের দীর্ঘদিনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে, সে একাধিকবার ঐ নারীকে নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন। তখন ঐ নারীও জনসন্মুখে হুমায়ুন ছাড়া এই দুনিয়াতে তার কেউ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। 

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর