১৯ জানুয়ারি, ২০২০ ১৬:০৭

বগুড়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা লাঞ্ছিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা লাঞ্ছিত

বগুড়ায় আবারও হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগির স্বজনদের মারপিট ও ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। এবার ওই চিকিৎসকদের মারপিটের শিকার হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। 

শনিবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। কার্ডিওলোজি বিভাগ থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগিকে কে অবজারভেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে বিক্ষুব্ধ ইন্টার্নদের মারপিটে রোগি, তার ভাই ও তিন ছেলেমেয়ে আহত হয়েছেন। 

এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে রবিবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

রবিবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শহরের ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন জানান, তার স্ত্রী মাজেদা বেগম জোসনা (৫৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে স্বজনরা তাকে শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগে ভর্তি করেন। তাকে সিসিইউতে রাখা হয়। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মাজেদা বেগমকে সুস্থ দাবি করে তাকে কার্ডিওলোজি বিভাগের সিসিইউ থেকে নিচে অবজারভেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন। রোগির সাথে থাকা ভাই জাহিদুল ইসলাম, মেয়ে ও দুই ছেলে এতে আপত্তি জানান। তারা বলেন, রোগির অবস্থা খারাপ তাকে নিচে নেয়া যাবে না। তখন এক ইন্টার্ন রোগির ভাইকে এক নারী ইন্টার্নের সাথে অশালীন আচরণের অভিযোগ তোলেন। এরপর সেখানে ১০-১২ জন নারী ও পুুরুষ ইন্টার্ন জড়ো হন। তারা প্রথমে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন। এরপর রোগির লোকজনদের একটি রুমে বন্ধ করে মারপিট করেন। তারা এতই ক্ষুব্ধ হন যে, রোগির শরীরে থাকা ক্যাথেটার খুলে ফেলেন এবং সবাইকে এলোপাথারী মারপিট করেন। এ সময় রোগির ছেলেমেয়েরা ইন্টার্নদের হাতপা ধরে ক্ষমা চেয়েও রেহাই পাননি। তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। সন্ধ্যার দিকে রোগি ও তার অসহায় স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আসেন। মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য এবং অন্যান্য চিকিৎসকদের অনুরোধে ইন্টার্নরা রোগি ও তার লোকজনকে চিকিৎসা দেবার নামে আবারো কার্ডিওলোজি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে নেবার পর বিক্ষুব্ধ ইন্টার্নরা আবারো রোগির লোকজনকে মারপিট করেন। এরপর তাদের হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরে রোগি ও তার লোকজনদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা শহরে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান। 
বগুড়া ছিলিমপুর মেডিকেল ফাঁড়ির এএসআই আবদুল কুদ্দুস জানান, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত রোগিকে নিচে না নিতে অনুরোধ করায় হাসপাতালের ইন্টার্নরা রোগি ও তার সন্তানদের মারপিট করেন। ইন্টার্নরা নিজেরা রুমের কাঁচ ভেঙে রোগির স্বজনদের দায়ি করেন। তাদের মারপিটে রোগি ও তার ৩-৪ জন স্বজন আহত হয়েছেন। এমনকি রোগির ক্যাথেটারও ছিঁড়ে ফেলা হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ইন্টার্নরা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন। কিছুদিন আগে তারা এক রোগির স্বজনদের মারপিট করেছিল। এ নিয়ে কাজ বন্ধ করে ধর্মঘটও ডেকেছিলেন। ওই রোগি মারাও গিয়েছিলেন।
হাসপাতালের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, সুস্থ রোগিকে কার্ডিওলোজি বিভাগ থেকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর নিয়ে রোগির স্বজনদের সাথে ইন্টার্নদের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তখন রোগির একজন স্বজন মস্তানি করেন। তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। রোগি ও তার লোকজনকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়নি। রোগি সুস্থ থাকায় তারা স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন। 

এদিকে, শজিমেক হাসপাতালে আবারো ইন্টার্নদের এহেন আচরণে সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর