নওগাঁর পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফের গুলিতে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ এখনও ফেরত দেয়নি। গত বৃহস্পতিবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকে ভারত এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে লাশ ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আজ শনিবার বিকালে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ। নিহত দুজন হলেন উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর বিজলী পাড়া গ্রামের সন্দিপ কুমার ও উপজেলার কাঁটাপুকুর গ্রামের মৃত: জিল্লুর রহমানের ছেলে কামাল হোসেন।
বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের সন্দিপ কুমার, চকবিষ্ণুপুর দিঘীপাড়ার মফিজ উদ্দিন ও কাঁটাপুকুর গ্রামের কামাল আহমেদসহ ১০/১৫ জনের সঙ্গে পোরশার দুয়ারপাল সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে গরু নিয়ে ফেরার পথে বিএসএফের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় অন্যরা পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও মফিজ, কামাল ও সন্দিপ বিএসএফের গুলিতে মারা যান। নিহত ওই তিন বাংলাদেশির মধ্যে মফিজ উদ্দিনের লাশ দুয়ারপাল সীমান্ত এলাকার ২৩১ নম্বর প্রধান পিলারের ১০ নম্বর সাব পিলারের কাছে বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে নীলমারী বিল এলাকায় পাওয়া যায়। অপর দুজন সন্দিপ কুমার ও কামালের লাশ পড়ে ছিল সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে ভারতের অংশে। লাশ দুটি বিএসএফের সদস্যরা নিয়ে যান। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুয়ারপাল সীমান্তের শূন্য রেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দুই ঘণ্টাব্যাপী পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নওগাঁ ১৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল একেএম আরিফুল ইসলাম ও ভারতের পক্ষে ১৫৯ বিএসএফের কমান্ডার হার্ষা জসি নেতৃত্ব দেন।
বিজিবি সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবাদ জানায়। বিএসএফ গুলি করে তিন বাংলাদেশিকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে। বৈঠকে লাশের ময়না তদন্তসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করে বিএসএফ।
পোরশার নিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম শাহ বলেন, সীমান্ত এলাকায় নানা ব্যবসায়িক কাজে দুই দেশের মানুষ চলাচল করে। বিচার ছাড়া এভাবে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানুষকে হত্যা করে লাশ ফেরত না দেওয়াটাও একটা অন্যায়। আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী লাশ ফেরত আনতে বিজিবির দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিজিবির নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল একেএম আরিফুল ইসলাম বলেন, বিএসএফের পক্ষ থেকে গুলি করে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় লাশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। লাশগুলো ফেরত দেওয়ার অনেকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে তারা লাশ হস্তান্তর করবে। তবে সকল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব