শখের বসে নানার ট্রলারে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ছিটকে পরে যায় ইমরান। এরপর সাগরে লুঙ্গি ফুলিয়ে ৬ দিন ভেসে থাকেন ইমরান। পরে ভারতীয় জেলেরা তাকে উদ্ধার করে। দীর্ঘ আইনি বেড়াজাল ও কূটনৈতিক যোগাযোগের পর শুক্রবার (১৪ ফেরুয়ারি) তাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বেনাপোল সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর কাছে হস্তান্তর করে।
সাগর থেকে বেঁচে ফেরা ইমরান স্বরণ করলেন সেই দিনের কথা। বললেন, 'সাগরে থাইকা মরণ দেখছি, সাতরাতে সাতরাতে গায়ের শক্তি শেষ হয়েছে। মরণ দেখছি বুঝজি,মোর শরীর মাছে খাইয়া হালাইবে। শখের বসে সাগরে গেছি মাছ ধরতে। আর সাগরে যামুনা!'
৬ মাস পরে বাড়িতে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে এমন কথা বলেন ইমরান। আজ সোমবার সকালে উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের চরদুয়ানি গ্রামে নানা বাড়িতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ইমরান।বলেশ্বর নদ ঘেষা নানা ইসমাইল খানের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ইমরানের সাথে। বর্ণনা দেন সেই জীবন যুদ্ধের। ইমরান বলেন, ট্রলারে সকাল ৬টার দিকে সকলের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হাত ধোয়ারর জন্য বালতি দিয়ে পানি উঠাতে গিয়ে সাগরে পরে যাই। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের ট্রলার দূরে সরে যায়। ভাসতে থাকি, কয়েক ঘণ্টা যাওয়ার পর হঠাৎ মনে পরলো ছোট বেলার কথা, মুহূর্তের মধ্যেই লুঙ্গি ফুলিয়ে ভাসতে থাকি, ততক্ষণ শরীরের শক্তি শেষ হয়ে গেছে। ভাসতে ভাসতে কোথায় গেছি বলতে পারিনা। কতদূর যাওয়ার পর বড় বড় ডলফিনের মতো মাছের দেখা মেলে, ভাবছিলাম ওরা আমারে খেয়ে ফেলবে, কিন্তু না... আমারে ওরা কোন ক্ষতিই করেনি। এভাবেই পার হলো কয়েক ঘণ্টা। এরপর ট্রলারে হাত থেকে ছুটে যাওয়া রশিতে বাধা অবস্থায় ফ্লুটসহ বালতি, সেটি ধরে ভাসতে থাকি। ততখনে আমার শরীরের শক্তি শেষ হয়ে গেছে। তখন ভাবছিলাম, এখনই বুঝি মারা যাবো, আর মনে হয় দুনিয়ায় থাকতে পারব না, মায়ের কাছে যাইতে পারব না। এভাবেই চলতে থাকলো কয়েকদিন, ৬ দিনের মাথায় ভারতীয় একটি মাছ ধরা এফবি বাবা পঞ্চানন ট্রলারের চালক মনোরনজন দাসসহ দুজন জেলে আমাকে দেখে সাগরে ঝাপ দিয়ে উদ্ধার করে। তখন আমার কোন হুশ ছিল না। ট্রলারে উঠিয়ে আমাকে খাবার দিয়ে সুস্থ করে। এরপর ভারতের জেলে সমিতিতে নিয়ে যায়, সেখান থেকে রায়দিঘি থানা এনে শিশু যত্ন সুরখা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী ইমরান মো. ইয়াহিয়ার ছেলে। তার মায়ের নাম আসমা বেগম।
দীর্ঘ ৬ মাস শিশু হোমে থাকেন ইমরান। ইমরান বলেন, সেখানে একবেলা সুজি দু'বেলা ভাত দিত। অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়েছে সেখানে। এখনো মাঝে মাঝে সেই বিভীসিকাময় দৃশ্য চোখে ভাসে।
ইমরানের মা আসমা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে পেয়েছি, আমি আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। মনে করেছিলাম ছেলেকে হয়তো আর ফিরে পাবো না। যারা ইমরানকে আনার জন্য সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
ইমরানের নানা ইসমাইল হোসেন খান বলেন, আমার নাতিকে পেয়ে খুশি। ওর খবর শুনে তো পাওয়ার আশাই ছেরে দিয়েছিলাম। আমার নাতিকে দেশে আনার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। ওকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল