মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি প্রত্যাহারকৃত টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ৭ আসামিকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার টেকনাফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (আদালত নম্বর-৩) এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জেল হাজতে পাঠানো আসামিরা হলেন- (১) টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (২) বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী (৩) এসআই নন্দলাল রক্ষিত (৪) কনস্টেবল সাফানুর করিম (৫) কনস্টেবল কামাল হোসেন (৬) কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন (৭) এএসআই লিটন মিয়া।
করোনাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৩ জন আসামিকে হাজত খানা থেকে কাঠগড়ায় আনা হয়। মামলার বাকি দুই আসামি আত্মসমর্পণ করেননি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, মামলায় উল্লেখিত ৮ নম্বর আসামি এসআই টুটুল এবং ৯ নম্বর আসামি কনস্টেবল মোস্তফা নামে কোন পুলিশ সদস্য জেলা পুলিশে নেই।
আসামিদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া ও এডভোকেট রাখাল চন্দ্র মিত্র জামিন আবেদন শুনানি করেন। পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, এপিপি এডভোকেট সাঈদ হোসাইন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন।
গত ৩১ আগস্ট মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ নিহত হওয়ার পরদিন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ব্যতীত জেলা হাজতে পাঠানো ৬ আসামিসহ ২১ পুলিশ সদস্যকে বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ৬ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসে।
অপরদিকে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি ও মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম পুলিশ হেফাজতে রেখে চট্টগ্রাম থেকে এনে কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়।
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলাটি টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের আদেশ মতে, টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত একটি হত্যা মামলা হিসাবে ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে রুজু করা হয়। যার নম্বর টেকনাফ থানা : ৯/২০২০, যাহার সিআর মামলা নম্বর : ৯৪/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)। দণ্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি রুজু করার সাথে সাথে মামলার এজাহারভুক্ত সকল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার ২ নম্বর আসামি- জেল হাজতে যাওয়া টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গত ৪ আগস্ট থেকে অসুস্থ হয়ে ছুটিতে যান।
এদিকে, আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় রুজু হওয়া মামলাটি তদন্তের জন্য র্যাব-১৫ এর কাছে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকালে পাঠানো হয়। বিষয়টি টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি এবিএমএস দোহা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী টেকনাফ মডেল থানা কর্তৃপক্ষ এ মামলার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে, র্যাব-১৫ থেকে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে মামলার সার্বিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ৯ জনকে আসামি করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৫ আগস্ট সকালে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গী ও ৩১ জুলাই এর ঘটনায় টেকনাফ পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৭ আসামি আত্মসমর্পণ করতে আসার আগে বেলা ২টা থেকেই কক্সবাজার আদালত চত্বর ও আশেপাশে চোখে পড়ার মতো বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডে মেজর সিনহা তার কক্সবাজারমুখী প্রাইভেট কারটি নিয়ে বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চেকপোস্টে পৌঁছালে গাড়িটি পুলিশ থামিয়ে দেয়। তখন তিনি উপর দিকে হাত তুলে তার প্রাইভেটকার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর ইনচার্জ লিয়াকত আলী পরপর ৩ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে বলে সেনা সদর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
ঘটনা তদন্তে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্ত্বা বিভাগ। ৪ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত