ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে গৌরীপুর পৌর এলাকায়। রবিবার দিনভর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ঘটনার সাথে জড়িতদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এমনকি পৌর মেয়র ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডারের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা।
এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র (একাংশের) যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে রবিবার ভোরে তারাকান্দা উপজেলার হারিগাছা এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও মইলাকান্দার কাউরাট এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম, মুজিবর ও রাসেলসহ মোট চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বোরহান উদ্দিন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটকের পর এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ।
তিনি বলেন, কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অধিকতর তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ জানা যাবে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাবের টহল অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সোহেল রানা জানান, গত বছর জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে শুভ্র’র সাথে চেয়ারম্যান রিয়াদের হাতাহাতি হয়। তখন এ ঘটনাটি তাৎক্ষনিক বেশী দূর এগোয়নি। এরপর থেকেই রিয়াদ ও শুভ্রর বিরোধের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন লাঞ্চিত হওয়ার জেদ মেটাতেই রিয়াদ তার দলবল নিয়ে শুভ্রর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যাব-১৪’র কমান্ডিং অফিসার ল্যাফটেন্যান্ট কর্ণেল এফতেখার উদ্দিন, গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাকের আহমেদ, ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পৌর এলাকার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি এক পর্যায়ে গৌরীপুর থানা ঘেরাও করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানায়।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তার ভাই সৈয়দ তৌফিকুল ইসলামের বাড়িঘর, ছোট ভাই সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম জুয়েলের ফার্ণিচারের দোকান, উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ ও তার ভাই মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ও তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেছে। নেতা-কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম ও প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন চন্দনের বাসা-বাড়িতেও হামলা ও ভাংচুর চালায়।
অপরদিকে নান্দাইল স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ত্রিশালে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার রাত ১০ টার দিকে পৌর এলাকার পান মহালে চায়ের দোকানে মাসুদুর রহমান শুভ্র তার সহযোগীদের নিয়ে চা পান করছিলেন। এ সময় দু’টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা দিয়ে আট থেকে ১০ জন দুবৃত্ত এসে শুভ্রকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। শুভ্রর সঙ্গে থাকা আল আমিন ও জাহাঙ্গীর নামের দুজনকেও জখম করা হয়। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেলে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে শুভ্রকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকী দুজনও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানায় চিকিৎসক।
নিহত শুভ্র পৌরসভার কালিপুর এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে। তিনি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বলেন জানান দলীয় নেতারা।
রবিবার বাদ আছর গৌরীপুর কেন্দ্রিয় ঈদগাহ মাঠে নিহত শুভ্রের জানাযার নামাজ শেষে তার মরদেহ পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাযার নামাজে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ স্থানীয় শত শত মুসল্লী অংশগ্রহন করেন। এর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুভ্রের মরদেহ শহরে কালিপুর এলাকায় নিজ বাসায় আনার পর তার পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। শুভ্র’র অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন তার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় লোকজন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল