বগুড়ার আদমদীঘিতে সজনের গাছে গাছে ব্যাপক ফুলের সমারোহ দেখা গেছে। এতে এবার সজনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনার আশা করা হচ্ছে। বাম্পার ফলনের আশায় বাড়ি বাড়ি ও বাগানে বাগানে গিয়ে সবজির পাইকাররা আগাম কিছু বাগান কিনে নিয়েছে। আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও সজনের বাম্পার ফলন পাবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে সবচেয়ে বেশি সবজি হিসেবে সজনের বাগান ও বসতবাড়িতে চাষাবাদ দেখা যায়। সান্তাহারের পাশাপাশি জেলার শিবগঞ্জ, সদর উপজেলা ও দুপচাঁচিয়া উপজেলাতেও বেশ সজনের চাষ হয়ে থাকে। কিছুদিন পর থেকে সজনে বিক্রি হবে হাটে-বাজারে।
এবার গ্রীষ্মের শুরুতেই উপজেলার সবখানে গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে সজনে ডাটার ফুল ফুটেছে। স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে সজনে ডাটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মুখরোচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে ডাটা স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাতবদল করে বিক্রি হয়ে থাকে।
এই সবজির চাষাবাদ কম হয়ে থাকে বলে বাজারে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনের দাম বেশি থাকে সবসময়। তবে এবার গাছে গাছে যেভাবে ফুল ফুটেছে, তাতে গত বারের চেয়ে এবার দাম একটু কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনে ডাটা পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বেশি হওয়ায় যেকোনো বয়সের মানুষ সজনে খেতে ভালবাসেন।
চিকিৎসকদের মতে, সজনে সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ আয়রণসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ সজনে ডাটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ও বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধ করে বলে সজনে ডাটা ওষুধি সবজি হিসেবেও ব্যাপক সমৃদ্ধ। এছাড়া গাছের ছাল এবং পাতা রক্ত আমাশয় পেটের পিড়া ও উর্চ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
চাষিরা জানান, সজনে ডাটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতি বছরে তিন থেকে চার বার পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম রাইখঞ্জন। সজনে গাছ যেকোনো পতিত জমি, পুকুর পাড়, রাস্তা বা বাঁধের ধারে, আঙিনা এমনকি শহরের যেকোনো ফাঁকা জায়গায় লাগানো যায়। এর কোনো বীজ বা চারার প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই সজনে গাছ জন্মায়। সজনে গাছের কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অযত্ন-অবহেলায় প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে ওঠে। বড় ও মাঝারি ধরনের একটি গাছে ছয় থেকে আট মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। বিনা খরচে অধিক আয় হওয়ায় অনেকেই ব্যাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, বিশেষ করে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের মাটি, পানি ও আবহাওয়া সজনে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় সান্তাহার পৌর শহর ও এর আশেপাশের এলাকার এসব গাছ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার টন সজনে উৎপাদন হয়। এই উপজেলায় মাটি ও আবহাওয়া সজনে চাষে উপযোগী। এখানে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ফলে অনেকে আম, জাম, কাঠাল ও লিচু বাগানের মতো এখন সজনে গাছের বাগান করতে শুরু করেছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই