মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে সুমি নামে এক শিশু গৃহকর্মী। পরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় নিজ এলাকায় আসলে মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে।
জানা যায়, করোনাকালীন তেঁতুলিয়া উপজেলার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমি আক্তারকে সিংগাইর উপজেলায় গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছিল তার বাবা-মা। তাদের আশা ছিল সুমি কিছু টাকা আয় করবে। তা দিয়ে সংসারের বাড়তি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সুমির লেখাপড়ার খরচটা অন্তত জোগাড় হবে। কিন্তু শিশুটিকে নির্মম নির্যাতনের দাগ নিয়ে একা একা ফিরতে হয়েছে বাড়ি। এখন সে অসুস্থ। তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শায়িত সে।
পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনের কারণে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত সোমবার রাতে ঢাকার হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তেঁতুলিয়াগামী একটি পরিবহনে তুলে দেয় শাহিনুজ্জামান। মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে তেঁতুলিয়া থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বাবা-মা।
এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুমাস আগে তেঁতুলিয়ার সাবেক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শিশিরের সিংগাইর উপজেলার বাসায় সুমিকে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠায় তার বাবা-মা। শাহীনুজ্জামান শিশির সিংগাইর উপজেলায় কর্মরত।
নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার কাঁদতে কাঁদতে জানায়, সাহেবের স্ত্রী জিমি বেগম প্রতিদিন আমাকে অনেকগুলো থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় বের করে দিতেন। আমি কাজ করতে না পাড়লে আমাকে লাঠি দিয়ে মারতেন। অনেক সময় আমাকে খাটের খুঁটিতে বেঁধে রাখতেন। ঠিক মতো খাবার দিতেন না। বাড়ি ফিরতে চাইলে আমাকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতেন।
সুমির বাবা দবিরুল ইসলাম জানান, ওই সাহেব আমাকে ফোনে জানায় তার কোনো সন্তান নেই। তিনি আমার মেয়েকে নিজের সন্তানের মতো দেখবেন। কিন্তু তিনি আমার মেয়ের ওপর ভয়ানক নির্যাতন করেছেন। আমি মোবাইলে মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে আমাকে কথা বলতে দিতেন না। কথা বলতে চাইলেই তিনি বলতেন আপনার মেয়ে বাথরুমে গেছে। আমি গরিব মানুষ। আমি আমার মেয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার চাই।
বুধবার ভোরে শাহীনুজ্জামান শিশির মুঠোফোনে জানান, শিশুটি প্রচুর মিথ্যা কথা বলে। আমার স্ত্রীকে মারধর করেছে। তার একটি অ্যালার্জি রোগ আছে। চিকিৎসক দেখিয়েছি। মারধরের ঘটনাটি সত্য নয়।
এ বিষয়ে মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এম মুশফিকুর রহমান জানান, শিশুটির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তবে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। তারপর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই