২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৬:৩৬

পেটের ওপর পা দিয়ে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন পল্লী চিকিৎসক, মারা গেলেন কৃষক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

পেটের ওপর পা দিয়ে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন পল্লী চিকিৎসক, মারা গেলেন কৃষক

নেত্রকোনার মদনে পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন হারেছ মিয়া (৬০) নামের এক কৃষক। থানার সামনে স্বজনদের আহাজারি

নেত্রকোনার মদনে পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন হারেছ মিয়া (৬০) নামের এক কৃষক। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেই পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান খানের দিকেই অপচিকিৎসার অভিযোগ ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়দের। হারেছ মিয়া উপজেলার মাখনা গ্রামের মৃত পাতার আলীর ছেলে।

বুধবার উপজেলার নায়েকপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান খানের বাড়িতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কৃষক হারেছ মিয়ার কোনো এক সময় মৃত্যু হয়। পরে দ্রুত মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ভুল চিকিৎসায় কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে নিজের আমন জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে হাওরে যান কৃষক হারেছ মিয়া। স্প্রে করে বাড়িতে এসে সকালের খাবার খেয়ে, অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত পরিবারের লোকজন তাকে নায়েকপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান খানের ফার্মেসিতে নিয়ে যান। সেখানে কৃষক হারেছ মিয়ার মুখে নল ঢুকিয়ে ওয়াশ করার চেষ্টা করেন পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান খান। এসময় হারেছ মিয়ার পেটের ওপর পা দিয়ে একাধিকবার চাপ দিলে, মুখ দিয়ে ভাত বের হয়। ভাতের সাথে রক্ত বের হলে সেখানেই মারা যান হারেছ মিয়া।
 
পরে পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত মদন হাসপাতালে নিয়ে গেলে, জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তুনু সাহা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, শাহজাহান খান একজন পল্লী চিকিৎসক। কিন্তু তিনি নিজেকে মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখছেন। তার ভুল চিকিৎসায় কৃষক হারেছ মিয়া মারা গেছেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় ভুল চিকিৎসার অগনিত অভিযোগ রয়েছে।
 
কৃষক হারেছ মিয়ার স্ত্রী রওশন আক্তার বলেন, আমার স্বামী ধানক্ষেতে কীটনাশক দিতে সকালে হাওরে যায়। হাওর থেকে এসে ভাত খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নিয়ে নায়েকপুর গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের কাছে গেলে, মুখ দিয়ে নল ঢুকিয়ে ওয়াশ করেন। পরে ডাক্তার পেটের ওপর উঠে পা দিয়ে চাপ দিলে, ভাত ও রক্ত বের হয় মুখ দিয়ে। তখন শরীর নাড়াছাড়া বন্ধ করে দিলে, মদন হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমরা গরিব মানুষ। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। 
  
মদন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার শান্তুনু সাহা জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই হারেছ মিয়া মারা যান। পুলিশ আসছে, তারাই বিষয়টি দেখবেন।

পল্লী চিকিৎসক শাহজাহান খান বলেন, মাখনা গ্রামের হারেছ মিয়া বিষ পান করে বুধবার সকালে আমার কাছে আসে। মুখ দিয়ে নল ঢুকিয়ে ওয়াশ করেছি। পেট ভর্তি ভাত থাকায় পুরোপুরি নল ঢুকানো সম্ভব হয়নি। পা দিয়ে পেটে চাপ দেওয়ায় মুখ দিয়ে ভাত ও রক্ত বের হয়ে আসে। সে আমার ওখানে মারা গেলে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলি। এখন লোকমুখে শুনছি, লাশ নাকি থানায় আছে। 

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, হারেছ মিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে, তদন্ত করে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
 
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর