নৌকার বাইরে কাউকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। নৌকার ভোট হবে টেবিলের ওপর ওপেনে। নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে একে-৪৭ নয়, প্রয়োজনে যা যা দরকার তা নিয়ে আমরা রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়াকে পাস করাতে আসব।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতাতে প্রকাশ্য জনসভায় এমনই হুমকি দিয়েছেন বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যের ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে রয়েছে।
তিনি বলেন, এমপি সাহেবের চোখ লাল হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের চোখ লাল হয়ে আছে। এমপি সাহেবের সমর্থন আছে আমার কথায়। উনার ইঙ্গিতেই আমি এগুলো বলছি। প্রশাসন আমাদের, পুলিশ আমাদের, সরকার আমাদের। আর কিছু বলার দরকার আছে?
মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওটির শুরু থেকে ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি এমন বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের পর ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ না হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
গতকাল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকালে বাজিতপুরের হুমাইপুর ইউনিয়নের টান গোসাইপুর গ্রামে অবস্থিত হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মাঠে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়ার পক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রকাশ্যে এ ধরণের হুমকি দেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তরা হুমাইপুরের চৈতনপুর ও নামা গোসাইপুর গ্রামের মাঝখানের রাস্তার ওপর ঝোলানো দলীয় প্রতীক নৌকা পুড়িয়ে দেয়। এর প্রতিবাদেই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। হুমাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. আরিফুজ্জামানের সভাপতিত্বে আব্দুল্লাহ আল মামুন ছাড়াও বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, বাজিতপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আকবর, সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসাইন প্রমুখ।
মেম্বার প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এজেন্টদের বলে দেবেন, নৌকার ভোট কাইত্যার তলে হবে না, নৌকার ভোট হবে সবার সামনে। কোনও মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট বিরোধিতা করলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বের করে দেবো। এক প্রার্থীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কে যেন বলেছে প্রয়োজনে রক্ত দেবে। আমরা আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পাঁচ গুণ রক্ত দেব।
এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন স্বীকার করে বলেন, এ সরকারের আমলে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ এলাকার (হুমাইপুর) মানুষ উন্নয়নের সুবিধা নিবে, কিন্তু ভোট দেওয়ার সময় আমাদের বিপক্ষে ভোট দেয়।
একে-৪৭ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানকার এক বিএনপি নেতার কাছ থেকে একে-৪৭ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য এর আগে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু উদ্ধার করতে পারেনি। তিনি এটা দিয়ে এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন বলে আব্দুল্লাহ আল মামুন দাবি করে বলেন, সেটার প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি একে-৪৭ এর কথা বলেছেন যাতে মানুষ ভয় না পায়।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর বাজিতপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৮টিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানায়, বাজিতপুর পৌরশহরের আলোচিত সাচ্চু হত্যা মামলায় পিবিআই সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা আসামি হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রয়েছে। এ মামলায় পিবিআই গত বছরের ১১ নভেম্বর মামুনকে গ্রেফতার করার পর তিনি প্রায় চার মাস হাজত খেটে জামিনে ছাড়া পান।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত