বগুড়ার শেরপুরে খানপুর দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের সরকারি পাঠ্যবই কেজি দরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়টির লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক ও দপ্তরি পাঠ্যবইগুলো বিক্রি করেছেন। ঘটনাটি মঙ্গলবার দুপুরের পর জানাজানি হলে প্রশাসনসহ সর্বত্রই তোলপাড় শুরু হয়। সেইসঙ্গে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগে জানা যায়, বিগত কয়েকদিন আগে খানপুর বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক গোলাপ মন্ডল ও দপ্তরি আব্দুর রশিদ শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমিক স্তরের পুরাতন পাঠ্যবইগুলো বিক্রির পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় নৈশ্যপ্রহরী মনির আলীকে পাঠ্যবইগুলো বস্তায় ভরতে বলেন। প্রথম পর্যায়ে রাজী না হলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখানোর পর সরকারি পাঠ্যবইগুলো পাঁচটি বস্তায় ভরেন এবং তাদের নির্দেশে গত সোমবার ভোররাতে একটি অটোভ্যানে করে স্থানীয় মির্জাপুরস্থ জুয়েল মিয়া নামে এক ভাঙারির দোকানে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ওই দপ্তরি ও শিক্ষক বিক্রি করে টাকা নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে নৈশ্যপ্রহরী মনির আলী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি সবকিছুই করেছেন আব্দুর রশিদ ও গোলাপ মন্ডলের নির্দেশে ও চাপে পড়ে। আমি এই ধরণের কাজ না করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে স্কুল থেকে বের করে দেবে এবং চোরের অপবাদ দেবে-এমন নানা হুমকি ধামকি দেয়। তাই সরকারি পুরণো পাঠ্যবইগুলো পাঁচটি বস্তায় ভরে ওই দোকানে নিয়ে বিক্রি করেছেন। তবে ঘটনাটি প্রকাশ না করতে খানপুরের কয়েরখালি বাজারে তাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঘটনাটি সর্ম্পকে বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত দপ্তরি আব্দুর রশিদ বলেন, বিদ্যালযের সরকারি কোনো পাঠ্যবই বিক্রি করিনি। তবে আমার বাড়ির কিছু ভাঙারি (৪৫ কেজি) মির্জাপুর বাজারের ওই দোকানে নিয়ে বিক্রি করেছেন বলে স্বীকার করেন। অপর অভিযুক্ত লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক গোলাপ মন্ডল এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাঈল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরণের কোনো ঘটনার খবর আমার জানা নেই। এছাড়া তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু লোক রয়েছে। মূলত তারাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্য এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এরপর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বিদ্যালয়ের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি এটি অপরাধ। তাই যদি সরকারি পাঠ্যবই কেউ বিক্রি করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ