নিচে সবুজ উপরে হলুদ। শীতের কুয়াশা ভেজা মাঠে সরিষার ফুল ফুটে মাঠের পর মাঠ এখন হলুদ বর্ণধারণ করেছে। কুয়শার জলরাশি ভেদ করে সবুজ মাঠের দেশে এবার হলুদের সমারাহ। যেন চিত্রশিল্পি রং তুলি দিয়ে আল্পনা এঁকেছে হলুদের। আর এই হলুদ ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিদের আনাগোনা বেড়েছে। আর ক্ষেতের পাশে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে চলতি মৌসুমে সরিষার ক্ষেত থেকে বগুড়ায় প্রায় ২০ টন মধু সংগ্রহ হবে।
বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শীত যতটা বাড়বে ততই সরিষার ফলন বাড়বে বগুড়ায়। আর সরিষা চাষিরা স্বপ্ন নিয়ে বুক বেঁধে আছে ভাল ফলন পাওয়ার আশায়। চলতি রবি মওসুমে বগুড়া জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন আশা করছেন সরিষা চাষীরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় এবার ২৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন সরিষার তেল। গত বছর চাষ হয়েছিল সর্বমোট ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর বগুড়ায় সরিষা চাষের জমি বেড়ে যাওয়ার কারণে ফলনও বেড়ে যাবে। বাড়তি ফলনের সঙ্গে এবার বাড়তি মধুও সংগ্রহ করতে পারবে মৌচাষিরা। বগুড়া সদর, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও গাবতলী উপজেলায় সরিষা চাষিদের ক্ষেতের পাশে মৌ মাছির বাক্স ফেলে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। এই অপরুপ দৃশ্যে মুগ্ধ স্থানীয় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ।
জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ডেরাহার, বিজরুল, থালতা মাজগ্রামসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে সরিষার ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এসব ফুলের মধু আহরণে নেমেছেন পেশাদার মৌয়ালারা। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষা মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে এ ফুল থেকে ও ফুলে। আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরে যাচ্ছে মৌয়ালাদের বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষার জমিতে। এভাবে দিনব্যাপী মৌমাছিরা যেমন মধু সংগ্রহ করে, আবার বিভিন্ন ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে পুরো জমির পরাগায়নেও সহায়তা করে। এ মৌসুমে মৌয়ালরা পোষা মৌমাছি দিয়ে প্রচুর মধু উৎপাদন করে যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় চাষিরাও বাড়তি আয়ের আশা করছেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডেরাহার মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা পঞ্চগড় জেলার ঝিটকিখুড়া গ্রামের মৌ খামারী সাদিত হোসেন জানান, তিনি প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও পোষা মৌমাছির ২০০টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসেছেন। এখানে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় স্থানীয় চাষিরাও খুশি হচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে সাড়ে তিন হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করছে মৌ চাষিরা। আর সরিষার ফুল ফোটার পর থেকে সময় কম থাকে বলে প্রায় এক মাসে বগুড়ায় ২০ টন মধু সংগ্রহ হবে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আদনান বাবু জানান এবার এই উপজেলায় ৪ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১০০ মেট্রিকটন সরিষা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে অধিকবার ফসল ফলানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এসব উদ্ভাবনী কৌশলে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করানোর ফলে এখন অনেক জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ হচ্ছে। আবার ওইসব সরিষার ফুল থেকে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে লাভবান হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পেশাদার মৌয়ালরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ১০০ হেক্টর ধরা হলেও এখন পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ২৭ হাজার ৬১৭ হেক্টর। চাষের জমি বেড়ে যাওয়ার কারণে বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যাবে। জেলার চাষিরা সরিষা চাষে সবসময় সফল হয়েছে। এই সফলতা ধরে থাকলে জেলায় ভালো সরিষার উৎপাদন পাওয়া যাবে। সরিষার ক্ষেতে এবার বেশ কিছু মৌ চাষি মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স ফেলেছে। চলতি বছর প্রায় ২০ টন মধু সংগ্রহ হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন