কুমিল্লার বুড়িচংয়ে মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক চাপায় অটোরিকশার ৬ আরোহী নিহতের ঘটনায় রাকিবুল হাসান রবিন (১৯) নামে ট্রাকের চালককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের মুরাপাড়া গ্রাম থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে পালানোর সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ রবিবার প্রেস বিফ্রিং বিষয়টি জানিয়েছেন কুমিল্লার র্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। গ্রেফতার আসামি রবিন বুড়িচং উপজেলার মিরপুর গ্রামের মোঃ খোরশেদ আলমের ছেলে। সে ৫ম শ্রেণি পাশ করেছে। তার পিতা একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। তার চাচা একজন ড্রাম ট্রাক চালক।
গ্রেফতার রাকিবুল হাসান রবিন জানান, তার কোনও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা কোন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর কোন প্রশিক্ষণ ছিল না। পরবর্তীতে সে ওস্তাদের বুদ্ধিতে অল্প টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মালিকের ড্রাম ট্রাক চালানো শুরু করে। দুর্ঘটনার পরবর্তীতে সে তুতবাগান রাস্তার পাশে অপর একটি ড্রামট্রাকে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানায়। এরপর সে ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে ময়নামতি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গোপনে কুচাইতলী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসা শেষে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার কনেশতলা গ্রামে আত্মগোপনে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, তার মালিক মো. আলেক ( ৫৫ ) তাকে এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দেয়। সে প্রথমে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কনেশতলা গ্রাম আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আঁচ করতে পেরে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে পালানোর সময় গ্রেফতার হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে সারারাত ড্রামট্রাকটি করে মাটি ভর্তি করে কুমিল্লা জেলার দেবপুর থেকে ঘোষনগরে সে একাধিক ট্রিপ মারে এবং প্রতিটি ট্রিপের উপর তার অধিক কমিশন রয়েছে। অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সে টিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতো।
তিনি বলেন, আনুমানিক ৫টার দিকে দেবপুর থেকে ঘোষনগরের উদ্দেশ্যে মাটি বোঝাই ড্রাম ট্রাকটি নিয়ে সে রওনা করে। রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও দ্রুত ট্রিপ মারার জন্য বেপরোয়া গতিতে ড্রাম ট্রাকটি সে চালাচ্ছিল। অধিক কুয়াশা, সারারাত ক্লান্তিহীন গাড়ি চালানো ও অতিরিক্ত গতির কারণে তুতবাগান এলাকায় যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশাটিকে সে দূর থেকে দেখেনি। গাড়িটির অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি সে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় দুর্ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লার র্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ঘটনার পর থেকেই দুর্ঘটনা কবলিত ড্রাম ট্রাকটির মালিক বুড়িচং উপজেলার মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আলেক কুমিল্লা আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে র্যাব কুমিল্লার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সিন্ধুরিয়াপাড়া কাটাজাঙ্গল তুতবাগান এলাকায় মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক চাপায় অটোরিকশার চালক-যাত্রীসহ ৬ জন নিহত হয়। পরে রাতেই বুড়িচং থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ