কাতারে হামাসের নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে ইসরায়েলে। সরকারের মধ্যে থাকা কট্টর-ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচসহ বহু ইসরায়েলি কর্মকর্তা প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় নেতানিয়াহু কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করে দোহায় পরিচালিত বিমান হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে এই হামলায় কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থানরত হামাসের কমপক্ষে পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী যখন গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টায় অংশ নিচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে এই হামলা চালানো হয়।
নেতানিয়াহুর এই ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাকে নিয়ে সোমবার ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এক্স প্ল্যাটফর্মে কাতারকে সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেন। তিনি হামাসের ওপর হওয়া হামলাকে গুরুত্বপূর্ণ, ন্যায্য এবং সর্বোচ্চ নৈতিক বলে উল্লেখ করে বলেন, এটা খুবই ভালো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাকে চাটুকারপূর্ণ ক্ষমা এবং লজ্জাজনক বলে আখ্যায়িত করেন। জেরুজালেম পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে স্মোট্রিচ নেতানিয়াহুর কাছে বেশ কিছু রেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন।
সাবেক সামরিক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যান কট্টর-ডানপন্থী ইসরায়েল বেইতেনু দলের প্রধান, নেতানিয়াহুর এই ক্ষমা চাওয়ার সিদ্ধান্তকে অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি দোহাকে এই কারণে দোষারোপ করেন যে, তারা গত বছর ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের ঐতিহাসিক প্রতিরোধ অভিযানের নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর এই ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করল, যেখানে কট্টর-ডানপন্থীরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক কূটনীতি এবং ইসরায়েলের সামরিক শক্তির প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।
কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামলায় এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায়ও তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
হোয়াইট হাউস এবং দোহা থেকে প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকের সময় কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে একটি ত্রি-পক্ষীয় ফোন কলে নেতানিয়াহু এই ক্ষমা চান।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, নেতানিয়াহু গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কাতারে হামাস লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন কাতারি সেনা নিহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, জিম্মি আলোচনার সময় হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্য করতে গিয়ে ইসরায়েল কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং ভবিষ্যতে আর এমন হামলা চালানো হবে না বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
কাতারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে নেতানিয়াহু হামলার জন্য এবং কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে দোহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিশ্চয়তাকে স্বাগত জানিয়েছে যে ভবিষ্যতে আর এমন হামলার পুনরাবৃত্তি হবে না। কাতার সরকার আরও জানিয়েছে যে তারা গাজা শান্তি প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় একজন কাতারি নাগরিকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী দুঃখিত। তবে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল হামাসকে লক্ষ্য করা। বিবৃতিতে পারস্পরিক অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং ট্রাম্পের দেওয়া ত্রিপক্ষীয় গোষ্ঠী গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়। এই গোষ্ঠীর কাজ হবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলি সমাধান করা।
উল্লেখ্য, হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের আতিথেয়তা করা কাতার বহু বছর ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে আসছে। ২০২৩ সালের যুদ্ধবিরতি এবং ২০২৫ সালের প্রথম দিকে একটি নতুন কাঠামো চুক্তিসহ একাধিক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের মধ্যস্থতা করেছে দেশটি।
এই হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই কোনো খবর জানতেন না বলে হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দা সৃষ্টি হয়। হামলায় শীর্ষ হামাস নেতৃত্ব পালাতে সক্ষম হলেও মোট ছয়জন নিহত হন।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল