ইসরায়েলের দীর্ঘ অবরোধ আর চলমান সংঘাতের ফলে গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাল মেটাতে এখানকার মানুষ এখন নকল বা বিকল্প খাবার তৈরির কৌশল খুঁজছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে কোনোমতে খাবার তুলে দিতে নিত্যনতুন ও অভাবনীয় রেসিপি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তারা।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে এই অঞ্চলের মানুষ সামান্য খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে এবং দুষ্প্রাপ্য উপকরণের বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
গাজার বাসিন্দাদের প্রধান খাদ্য রুটি তৈরির জন্য গমের আটা ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা প্রথমে পাস্তা ব্যবহার করতে শুরু করেন। পাস্তা ভিজিয়ে নরম করে সামান্য গমের আটা মিশিয়ে তৈরি হয় এই রুটি। তবে রুটির স্বাদ ও গঠনে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও এটি ক্ষুধা নিবারণের কাজ চালিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে পাস্তার দামও আকাশছোঁয়া হলে, মানুষ অন্য বিকল্পের সন্ধানে নামে।
পরবর্তীতে অনেকে ডাল গুঁড়ো করে তা দিয়ে রুটি বানানোর চেষ্টা করেন। তবে এর স্বাদ ছিল অত্যন্ত বেমানান এবং অপ্রীতিকর। যা পরের দিন আরও শক্ত হয়ে যাওয়ায় গরম করে বা দুক্কাহ দিয়ে খেতে হয়েছে। উল্লেখ্য, দুক্কাহ (যা মূলত ভাজা গম ও মসলার মিশ্রণ) এখন ডালের গুঁড়ো দিয়েই তৈরি হচ্ছে। ফলে ডাল দিয়ে তৈরি রুটি, যার সঙ্গে আবার ডাল দিয়েই তৈরি দুক্কাহ, খাচ্ছেন এখানকার মানুষ।
খাদ্য সংকটের মধ্যেও শিশুদের মুখে একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার তুলে দিতে এখানকার পরিবারগুলো বিকল্প খুঁজে চলেছে। এমনই এক প্রচেষ্টায় ক্যানবন্দী মাংস ও ডাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় নকল বার্গার। যদিও ক্যানবন্দী মাংসের টেক্সচার ও স্বাদের কারণে প্যাটিগুলো বেশ নরম ও ভেঙে যাচ্ছিল, তবুও এটি স্পেশাল ট্রিট হিসেবে খাওয়া হয়েছে। বান না থাকায় সাধারণ রুটি দিয়ে এই বার্গার স্যান্ডউইচ তৈরি করা হয়।
শিশুদের জন্য স্ন্যাকসের অভাব মেটাতে হালাভা (তিল ও মিষ্টির তৈরি এক ধরনের মিষ্টি খাবার) দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে চকোলেট স্প্রেড। ত্রাণ কিট থেকে পাওয়া হালাভায় কোকোয়া ও জল মিশিয়ে তা আগুনের উপর গরম করে চকোলেটের বিকল্প তৈরি করছেন মায়েরা। এছাড়া, পাস্তা ভেজে মসলা মিশিয়ে নকল চিপস এবং ছোলা ভেজে মসলা মাখিয়ে নকল বাদাম তৈরি করা হচ্ছে। যদিও ছোলা ভেজে বাদামের বিকল্প তৈরি করা বেশ পরিশ্রমসাধ্য কাজ।
অবরোধের আগে ত্রাণ কিটগুলিতে পাস্তা ও ডাল সহজলভ্য ছিল কিন্তু বর্তমানে সেগুলিও দুষ্প্রাপ্য এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এই কঠিন সময়ে গাজার বাসিন্দারা উপহাস করে বলছেন, তারা বিভিন্ন রূপে ছোলা, পাস্তা এবং প্রধানত ডাল ছাড়া অন্য কিছু খাচ্ছেন না। এই মর্মান্তিক বাস্তবতা সত্ত্বেও তারা কঠিন এই পরিস্থিতি থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল