প্রশাসনে দুই স্তরের পদোন্নতির প্রক্রিয়া থেমে আছে। ২০ ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম সচিব হতে না পারা ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পুনঃপর্যালোচনা (রিভিউ) শেষে পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন সচিবকে সরিয়ে দেওয়ায় পদোন্নতির কার্যক্রম একেবারেই থেমে গেছে। নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম এগোবে না বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। পদোন্নতিসংক্রান্ত সর্বোচ্চ ফোরাম সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) হচ্ছে না। এতে অপেক্ষা বেড়েছে পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের। তবে অক্টোবরের মধ্যে এই দুটি পদোন্নতির জট খুলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
একাধিক সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে জনপ্রশাসন সচিব নেই। আবার এসএসবির দুই সদস্য মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব দেশের বাইরে। সংগত কারণেই এসএসবি এখন আর হবে না। সূত্র আরও জানায়, গত ২০ মার্চ সরকার প্রশাসনের ১৯৬ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়। এর মধ্যে ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য ৩২০ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছিলেন ১৩৭ জন। আর বাদ পড়েন ১৮৩ জন। এরপর বঞ্চিতরা দল বেঁধে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই এসএসবির কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের কর্মজীবন, পারিবারিক তথ্য, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ও গোয়েন্দা তথ্য নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এই মাসেই রিভিউ পদোন্নতি হিসেবে যুগ্ম সচিবদের পদোন্নতি দেওয়ার কথা থাকলেও এটি আর হচ্ছে না। একই সঙ্গে প্রশাসনের নিয়মিত ২০ ব্যাচের যুগ্ম সচিব পদের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার কথা রয়েছে। অনেক দিন ধরেই অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির আলোচনা হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি। অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির প্রক্রিয়াও চলমান বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বঞ্চিত কর্মকর্তারা আশা করছেন এবার তাঁরা পদোন্নতি পাবেন। অপরদিকে ২০ ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও ডিসির দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের সবাইকে ওএসডি করে রেখেছে সরকার। এমনকি তাঁদের কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান চলছে।
জানা গেছে, ২০ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০০১ সালের মে মাসে চাকরিতে যোগ দেন। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ২৯০ জন কর্মকর্তার কর্মজীবন যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ১৮০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। তবে আর্থিক অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তাসহ যাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে তাঁরা পদোন্নতির বিবেচনায় থাকছেন না। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, যাঁরা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডিসি ছিলেন তাঁরাও পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
এসএসবির মিটিং ও পদোন্নতির বিষয় জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসএসবির সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে জনপ্রশাসন সচিব না থাকলে সাধারণত এই মিটিং হয় না। তবে সভাপতি চাইলে হতেই পারে। পদোন্নতির বিষয়ে বলেন, ‘এপিডি বিভাগ শুধু সহযোগিতা করে, সিদ্ধান্ত নেয় এসএসবি। আমরা যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব দুইটার জন্য প্রস্তুত আছি। বাকিটা নির্দেশনার ওপর নির্ভর করে।’
পদোন্নতির আশায় থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য এসএসবির বৈঠকে বিবেচনায় আনা উচিত।
সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, পেশাদার, দলনিরপেক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য গুরুত্ব দিতে হবে।
তাদের বঞ্চিত করলে কর্মক্ষেত্রে হতাশা বাড়ে, কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই যোগ্যতা থাকলে পদোন্নতিবঞ্চিত করা অন্যায় হবে। সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, একজন ব্যক্তি কেন বা কোন কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত হলেন সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট করে জানায় না। এটি জানানো উচিত।