বাংলাদেশ পারফরম্যান্স আর্ট গ্রুপ শিল্পকলা একাডেমিতে পরিবেশন করলো পারফরম্যান্স আর্ট ‘জালাল উদ্দীন রুমী’।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আয়োজিত হয় এই পারফরম্যান্স আর্ট। অপূর্ব কুমার কুন্ডুর রচনায় এটির নির্মাণ ও পরিবেশনায় ছিলেন সুজন মাহাবুব।
পারফরম্যান্সের কাহিনী গড়ে উঠেছে জালাল উদ্দীন রুমীর অন্তিম প্রয়াণের শেষ এক ঘণ্টাকে ঘিরে। সূর্য ডোবার পর মাগরিবের নামাজের আযানের মধ্যদিয়ে নাটক শুরু এবং আলোকিত চাঁদের জ্যোৎস্না ফোটার মধ্যদিয়ে নাটকের সমাপ্তি। কেনিয়া রাজ্যের এবং রুম প্রদেশের শাসনকর্তা মঈন উদ্দীন শাহ পরওয়ানের একান্ত অনুরোধে জালাল উদ্দীন রুমীর মৃত্যু পরবর্তী সমাধিস্থান নির্মাণ ভাবনা এবং শোকগাঁথা তথা এপিটাফ রচনার প্রেক্ষাপটকে ঘিরেই নাটকটি।
জালাল উদ্দীন রুমীর অন্তিম ভাবনা-চিন্তা এবং শোকগাঁথা রচনার অন্তিম মুহূর্তগুলিতে স্মৃতি হয়ে একে একে ধরা দেয় মঈন উদ্দীন শাহ পরওয়ানের আগমন ও আবেদনের কথা। মাতা মুইমিনা খাতুনের স্নেহ-আদরে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন আত্মস্থ করার কথা, গওহর খাতুনের মতো জীবনসঙ্গীর সংস্পর্শে দিওয়ানে শামস তাব্রিজী রচনার কথা, অসংখ্য গুণগ্রাহীর পার্থিব ও আধ্যাত্মিক প্রশ্নের উত্তর এবং সংশয়ের সমাধান দেওয়ার কথা, আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় শিক্ষাগুরু শামস তাব্রিজীর সান্নিধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করার কথা, চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খানের আক্রমণের হাত থেকে সমৃদ্ধ নগরী দামেস্কাসকে রক্ষা করাসহ আরও অনেক ঘটনার ঘনঘটা। ঘটনার ঘনঘটার ঘূর্ণন আবর্তে সমাধিস্থান নির্মাণ ভাবনা রচনার পাশাপাশি শেষাবধি এপিটাফ তথা শোকগাঁথা রচিত হয়। আর-সেখানেই নাটক-জালাল উদ্দীন রুমী, যেন মহাকবি-মাওলানা-দার্শনিক জালাল উদ্দীন রুমীর চিরন্তন অস্তিত্বের সন্ধান খুঁজে পাওয়া যায় তারই রচিত এপিটাফ তথা শোকগাঁথা রচনাবলীতে।
থিয়েটার পারফরম্যান্স নির্মাতা ও উপস্থাপক সুজন মাহাবুব বলেন, বাংলাদেশ পারফরম্যান্স আর্ট গ্রুপের থিয়েটার পারফরম্যান্স-জালাল উদ্দীন রুমী সমকালীন শিল্পের এক অনন্য রূপ। যেখানে পটচিত্র, যাত্রা, বাচিক নাট্য, শ্যাডো থিয়েটার, কবিতা, নৃত্য, সুরের আলো ও শরীরের অভিব্যক্তি ব্যবহার একত্র হয়ে সৃজনশীল মঞ্চে সৃষ্টি করছে এক শৈল্পিক প্রকাশভঙ্গি। এ পারফরম্যান্স শুধু বিনোদন নয়, বরং দর্শকের হৃদয়ে আধুনিকতার ভেতরে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক সুরের চিন্তা এবং অনুভূতির নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
নাট্যকার অপূর্ব কুমার কুন্ডু বলেন, মহাকবি রুদাকী, মহাকবি ফেরদৌসি, মহাকবি শেখ সাদী পারস্য কাব্য সাহিত্যোকাশে এক একটি স্বর্ণোর্জ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের যোগ্য উত্তরাধিকারী জালাল উদ্দিন রুমী। আপন আলোয়, আপন শক্তিতে উদ্ভাসিত রুমীকে ইতিহাসের আলোয় দেখার নাটক জালাল উদ্দীন রুমী। তিনি পারস্যের, তিনি পাশ্চাত্যের আবার তিনিই আমাদের এই প্রাচ্যের। তিনি কবি, তিনি মহাকবি, তিনি বিশ্বের কবি জালাল উদ্দীন রুমী। এ নাটক তাঁর বর্ণিল জীবন এবং তাঁর সৃজিত সাহিত্য কর্মকে আশ্রয় করে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত