বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধিতে নদীতে আবারো নাব্যতা ফিরে এসেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌঘাটগুলো আবারো চলাচল শুরু করেছে। সরব হয়ে উঠেছে যমুনা নদীর নৌঘাট এবং ভিড় বেড়েছে নৌ রুটে। চরের প্রায় ৮ হাজার মানুষের দুর্ভোগ কমলেও এই পানি বৃদ্ধি বন্যার আভাস দিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে উপজেলার ব্যস্ততম সারিয়াকান্দি কালিতলা নৌঘাট ৫ কি.মি. দূরে দেবডাঙায় স্থানান্তর করা হয়। বগুড়া সারিয়াকান্দি কালিতলা নৌঘাট থেকে মাদারগঞ্জ জামথল নৌঘাটে হাজার হাজার যাত্রীসহ মোটরসাইকেল ও নানা ধরনের কৃষিপণ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো পরিবহন করা হয়। এই নৌরুটে যাত্রী পরিবহণ গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ ছিল। ঘাটটি একই উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের দেবডাঙায় স্থানান্তর করা হয়। এ কারণে যাত্রীদের কয়েক কিলোমিটার বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়েছে। তাদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। অপরদিকে সময়ও বেশি অপচয় হয়েছে।
যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে এই নৌরুটে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হলে চলাচলকারি নৌকাগুলো ডুবোচরে আটকে যেত। মাঝিরা নদীতে নেমে যাত্রীসহ নৌকাগুলো ধাক্কা দিয়ে চর থেকে নামিয়ে গন্তব্যে যেতে হত। গত কয়েকদিনে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে কালিতলা নৌঘাট এখন দেবডাঙা থেকে পুনরায় কালিতলা আসতে শুরু করেছে। দেবডাঙা নৌঘাটে চলে যাওয়া অর্ধেক নৌকা এখন কালিতলা নৌঘাটে ফিরে এসেছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধিতে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। নদীতে নৌকা চলাচলের পথ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নদীর খেয়া ঘাটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রী এবং মালামাল উঠানামা ও নৌকার শ্যলো মেশিনের শব্দে আবারও মুখরিত হতে শুরু করেছে। পানিবৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপদসীমার অনেক নিচে রয়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে সারিয়াকান্দির যমুনার কালিতলা, মথুরাপাড়া, দেবডাঙা, পারতিতপরল, রৌহাদহ এবং বাঙালির ছাগলধরা, হিন্দুকান্দি, নারচীসহ অর্ধশতাধিক নৌঘাটগুলো।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি সদরের খেয়া ঘাটের মাঝি আলতাফ আলী জানান, খালে পানি না থাকায় খেয়া নৌকা বন্ধ ছিল। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে খেয়ার নৌকা আবার পুরোদমে চলাচল শুরু করেছে। নানা ধরনের মালামাল আর যাত্রী দিয়ে খেয়ার নৌকা প্রায় সবসময় পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে।
পানি বাড়ার কারণে যমুনার ডাকাতমারা, মূলবাড়ী, ইন্দুরমারা, কাজলা, বেনিপুর, বাওইটোনা, বেড়াপাঁচবাড়িয়া, চরদলিকা, চালুয়াবাড়ী, বেনিপুর, শোনপচা, চরঘাগুয়াসহ ১১২ টি চরের গ্রামের মানুষরা তাদের নিজস্ব নৌকা নিয়েই নদীপথে সহজেই চলাচল করতে পারছেন।
সারিয়াকান্দি কাজলার কুড়িপাড়া চরবাসী আজিজার রহমান জানান, নদীতে পানি হওয়ায় আমরা সহজেই কৃষিপণ্যগুলো বাজারে নিয়ে যেতে পারছি। এতে কৃষিপণ্য নিয়ে আসতে পরিবহণ খরচ কম হচ্ছে। ফলে পণ্যগুলো বিক্রয় করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া বন্দর হতে সারসহ নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সহজেই ঘরে আনতে পারছি।
সারিয়াকান্দি কালিতলা ঘাটে কর্মরত মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সারিয়াকান্দিতে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে যাত্রীর সংখ্যা মোটামুটি বৃদ্ধি পেলেও আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। এখনো নদীর নাব্যতা পুরোপুরি ফিরে না আসায় নৌ পথে গাইবান্ধার ফুলছরি, জামালপুরের গুটাইল, উলিয়া, সিরাজগঞ্জের কাহিপুর, টাঙাইলের ভুঁয়াপুর পর্যন্ত এখন যাত্রী সংখ্যা খুবই কম।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, শুক্রবার যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ৯.৫১ সেন্টিমিটার, শনিবার সকাল ৬ টায় পানির উচ্চতা ৯.৬৪ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৭.০৬ মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ তাসকিয়া জানান গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা এবং বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো বন্যা হাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌরুটের গতিপথ স্বাভাবিক হওয়াতে শুধু যে চরবাসীরাই উপকৃত হচ্ছে তা ঠিক নয়। নৌযানের সাথে সম্পৃক্ত থেকে অনেক মানুষই তাদের কর্মসংস্থান ফিরে পেয়েছে। সরকারী পদক্ষেপে নদীগুলোর গতিপথ ফিরিয়ে দিলে নৌপথে যাতায়াতে যাত্রীদের অর্থ এবং সময় সাশ্রয় হতো। অপরদিকে মহাসড়কগুলোতে যানজট অনেকাংশেই কমে যেত।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল