সদর উপজেলার ভগবতীপুর চরের জোহরা খাতুন ধরলা নদীর চরে বাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় এক সপ্তাহ হয়েছে। তিনি কষ্টে তার কথা জানান, চুলা জ্বালাতে পারছি না, ঘরেও সবকিছু তলিয়ে গেছে, ছাওয়া পোয়া (ছেলে-মেয়ে) নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
এরকম একই অবস্থা জেলার ব্র্হ্মপুত্র নদ, দুধকুমর ও তিস্তা নদীর অববাহিকার ৯ উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপ চরের বাসিন্দাদের। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ নদীর পানি বেড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে তিস্তার পানি সামান্য কমলেও আবারো ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার দুপুরে স্থানীয় পাউবো জানায়,ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪১ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৫৩ সে.মি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমরা ২৪ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১২ জন মানুষ পানিবন্দীর কথা বলা হলেও তা দুই লক্ষাধিক ছাড়িয়ে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়। আর এসব বানভাসীর দুর্ভোগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে কৃষিবিভাগের তথ্য মতে, চলতি বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশু খাদ্য সংকট। বন্যার্তদের কেউ কেউ চরের উঁচু স্থানে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
বর্তমানে খাদ্যের সংকটের পাশাপাশি শৌচাগার সংকটে পয়ঃনিস্কাশন করতে মারাত্মক বিপাকে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে নারী,বৃদ্ধ ও শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়াও বাড়িতে পানি ওঠায় কেউ কেউ নৌকায় রান্না ও বাস করছেন। দুর্গত এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, জ্বর ও দীর্ঘ সময়ে পানিতে থাকায় অনেকের পায়ে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ১লাখ ৪১ হাজার ৬১২ জন মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ৩২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বানভাসি মানুষের কথা চিন্তা করে ৩৬১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে। অনেক পানিবন্দী এলাকায় সরকারি বা বেসরকারীভাবে কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি বলে বানভাসীরা প্রতিদিন অভিযোগ করছেন। গত এক সপ্তাহে প্রায় দুই শত ঘর বাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর কিছুটা বাড়লেও ধীর গতিতে বুধবার থেকে সকল নদীর পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
বিডি প্রতিদিন/এএ