যমুনার নদীর পানি বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১০ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর পয়েন্টে ১০ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৬ সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত শুরু করেছে।
বসতভিটায় পানি না উঠলেও বসতভিটার চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে চলাচলে চরম সমস্যা পড়ছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। নৌকাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। অন্যদিকে, চরাঞ্চলের সকল ফসলী জমি তলিয়ে থাকায় কৃষক-শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছে। এতে বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে খাদ্য ও শিশু খাদ্যের সংকট দেখা দিযেছে। এছাড়াও পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত এলাকা শাহজাদপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ভাঙ্গনে ফসলী জমি ও বসতভিটাসহ মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার শাহজাদপুরে নদীভাঙ্গনে ২০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযান করছে। এছাড়াও ফসল নস্ট হওয়ায় কৃষকরা ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
শাহজাদপুরের মাজ্জাম গ্রামের আবু জাফর, আবুল কালাম আজাদ, বারিকুল শেখ, ফুলমালা, কমলা খাতুন, সাবানি খাতুন, হালিমা খাতুন, জয়ফল খাতুন, রমিছা খাতুন ও সারমিন খাতুন জানান, চোখের সামনে ১২/১৪টি বসতঘর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ধান, চাল, খাট, আলমারী সহ মূল্যবান কিছুই ঘর থেকে বের করতে পারে নাই। এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। এখন তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে একবেলা আধ বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছে। তারা আরও জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় ফকিরপাড়া গ্রামের ৩টি পাকা বাড়িঘর যমুনা নদী গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো মাজ্জান, ফকিরপাড়া ও বিনোটিয়া গ্রামের ৪টি পয়েন্টের প্রায় শতাধিক স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের মেম্বর আব্দুর রাজ্জাক জানান, কাওয়াকোলা ইউনিয়নের পুরো এলাকার ফসলী জমি পানির নীচে রয়েছে। বসতভিটায় পানি না ওঠলেও চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। ঘর থেকে বের হবার সুযোগ নেই। এককথায় বলা যায় মানুষজন ঘরবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
সিরাজগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান জানান, ৩০ জুনের আগ পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকায় ১৪০ মে.টন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ নেই। তবে ঈদের আগে বন্যাকবলিত সহ ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, দুই একদিনের মধ্যেই পানি কমতে শুরু করবে। তবে পানি বাড়ায় শাহজাদপুরের বিনোটিয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থান ধ্বসে গিয়ে কয়েকটি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম