বরগুনার তালতলী উপজেলার বুড়িশ্বর নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নে (পায়রা) নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। বসত-বাড়িসহ কৃষিজমি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না করলে যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে বসত-ভিটাসহ ফসলি জমি।
গ্রামবাসী জানান, গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতের দিকে বুড়িশ্বর নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আকস্মিক ভেঙে দুটি অংশের প্রায় ১৫০ মিটার বুড়িশ্বর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ৭টি গ্রাম। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপ স্বাভাবিকের চাইতে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির এ অবস্থা দেখে গ্রামবাসীর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে সোবাহান পাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা গ্রাম। পানির আতঙ্কে এই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
দুই দশক ধরে ভয়ঙ্কর বুড়িশ্বর নদী তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া এবং জয়ালভাঙ্গা গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি গ্রাস করেছে। ভাঙনে সব হারিয়ে অনেকে গ্রামবাসী বাস্তচ্যুত হয়ে রাজধানী ও জেলা শহরে বস্তিতে গিয়ে বসবাস করছে। নতুন করে বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের সোবাহান পাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা ও তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ৪ হাজারের বেশী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
নলবুনিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ গৃহবধূ জ্যোৎস্না বেগম আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘মোগো শ্যাষ সম্বল এই ভিটা পানিতে লইয়া গ্যালে মোরা কুম্মে থাকমু, কই যামু। ভাংতে ভাংতে এইহানে আইছে।’ জেলে মিরাজ মিয়া বলেন, ‘নদী খালি ভাইঙ্গা মোগো সব শ্যাষ কইর্যা দেছে। যেডু আছে হ্যা সব ভাইঙ্গা গ্যালে পোলা মাইয়া লইয়া কোন হানে যামু, এহন হেই চিন্তায় আছি।’
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তেতুলবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর বলেন, ‘৩ বিঘা জমি ছিল। ছিল বড় বাড়ি। ৬ বারের ভাঙনে সব বুড়িশ্বর নদীতে লইয়া গ্যাছে। ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় এখন ১ শতাংশ ফসলের জমিও নেই। কোনোমতে রাস্তার ধারে একটা ঘর বানাইয়া পোলা মাইয়া লইয়া ঘুমাই। হেও আবার এহন ভয়ের মধ্যে আছি ভাঙনে আবার ঘর লইয়া যাইবে কহন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সোহাগ বলেন, বিকল্প রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এর অনুমোদন পেলে ৬-৭শ’মিটার রিং বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে এখানে চায়নার সি আই পি প্রকল্পের ফেস-২ এর সার্ভে কাজ চলমান আছে। এই সার্ভে শেষে আগামী অর্থ বছরে দ্রুত স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর