বগুড়ার মাঠগুলোতে পুরোদমে আমন চাষাবাদ শুরু হলেও ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ডিলার ও ব্যবসায়ীরা সারের কৃত্রিম সংকট ও দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে আগে বরাদ্দ পাওয়া ৮শ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি করছেন ১১শ টাকায়। প্রতিবস্তায় ৩শ টাকা বেশি দিয়েই সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এতে করে ফসল উৎপাদনে কৃষকের খরচ বেড়ে যাবে। সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে আগের দামেই সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন চাষিরা। হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের কেজিপ্রতি ছয় টাকা দাম বৃদ্ধি করায় আবাদ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তবে জেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি সার থাকার পরেও দাম নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে।
জানা যায়, ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কেজি প্রতি ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনর্নিধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কৃষকের কপালে চিস্তার ভাঁজ পড়েছে।
বগুড়া জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে ৫০ ভাগ জমিতে চাষ হয়েছে। বর্তমানে বগুড়ার মাঠে মাঠে জমি প্রস্তুত করা, বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন শেষে জমিতে রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে তারা। উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হওয়ায় প্রতি বছরই লাভের মুখ দেখে চাষীরা। তবে আমন চাষে অপরিহার্য ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে সংশয়ে কৃষক। জেলায় চলতি আগস্ট মাসে ৯ হাজার ৩৫৫ টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে মজুদ রয়েছে ১০ হাজার ২শ ৮ টন। তারপরও সারে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চাষিরা। সরকারীভাবে এখনো বর্ধিতমূল্যে সার বিতরন শুরু হয়নি।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাধুবাড়ী গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, মৌসুমের শুরুতেই ইউরিয়া সার নিয়ে কারসাজি শুরু হয়েছে। ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দোকানে সার কিনতে গেলে বলেন সার নেই। কিন্তু বাড়তি টাকা দিলেই মিলছে সার। অথচ এসব সার আগের বরাদ্দের ও আগের দামেই কিনেছেন তারা।
সারিয়াকান্দিন মোজাম্মেল হক নামে কৃষক জানান, এখন সারের খুবই প্রয়োজন। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে সার কিনতে হলো। আটশো টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে এগারশো টাকায়। এতে আমন চাষের খরচ বাড়বে। এই ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
বগুড়া বিএডিসির তথ্য মতে এমওপি প্রতি টন ১৩ হাজার টাকা। টিএপি প্রতি টন ১৪ হাজার ও টিএসপি প্রতি টন ২০ হাজার টাকা। বগুড়ার বাফার সুত্রে জানা যায়, ইউরিয়া ৮০০ টাকা (৫০ কেজি), টিএসপি ১১০০ টাকা (৫০ কেজি) ও ডিএপি ৮০০ (৫০ কেজি) টাকা বস্তা।
বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার কামরুল হাসান জানান, সার বিক্রি করতে নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। হঠাৎ করে সারের দাম বাড়লো কেন তা নিয়ে বৃষক পর্যায় থেকে প্রশ্ন করে থাকে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আগের বরাদ্দের সার বাড়তি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। কোনো ডিলার-ব্যবসায়ী এ ধরণের কাজ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে যেন বেশি দাম নিয়ে সার বিক্রি করতে না পারে এজন্য প্রত্যেক ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বগুড়ার উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, পর্যাপ্ত পরিমান সারের মজুদ রয়েছে। জুলাই থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত ধান রোপন করে চাষীরা। আগাম জাতের ধান অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কাটা শুরু হলেও নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান কর্তন শেষে কৃষকের ঘরে উঠে সোনালী ফসল। আমন চাষে সারের প্রয়োজন হয়। বগুড়ায় সার অভাব হবে না।
বিডি প্রতিদিন/এএ