কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী একটি চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া চারজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফারজানা হাসনাত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পরিদর্শক তানবীর আহম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন-প্রধান পরিকল্পনাকারী মো. রতন হোসেন, মো. আলাউদ্দিন (২৪), মো. সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), মো. বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), মো. আব্দুল মান্নান (২২), মো. নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)।
এদের মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন-রতন, মান্নান, জীবন, দ্বীপ, বাবু ও সোহাগ। আর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসলাম, রাসেল, আলাউদ্দিন ও নাঈম।
তানবীর আহম্মদ জানান, বিকেলে আসামিদের আদালতে আনা হয়। আদালতে ছয় আসামির সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিচারক রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিবি উত্তর) মো. হেলাল উদ্দিন সোমবার রাতে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে আসামিদের ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল নিয়ে আসেন।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঈগল পরিবহনে ডাকাতির পাশাপাশি এক নারী যাত্রীকে গণধর্ষণও করেছেন ডাকাত দল। এরপর বুধবার ভোরে ডাকাতদলের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকায় বাসটি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান। ধর্ষণের শিকার ওই নারী বুধবার বিকালে মধুপুর থানায় ধর্ষণ ও ডাকাতির মামলা করেন।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস অন্তত ২৪ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সেখান থেকে ৫ মিনিট যাওয়ার পর মূল সড়ক থেকে প্রথমে ৩ জন যাত্রী ওঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আরও ৪ জন যাত্রী ওঠেন। নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া কিছুদূর যাওয়ার পর আরও ৩ জন যাত্রী সেজে বাসে ওঠেন। আনুমানিক রাত ১২টার দিকে যাত্রীরা ঘুমানোর একপর্যায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকা পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা হঠাৎ করে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।
কিছু দূর যাওয়ার পরে বাসটিকে ঘুরিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা কালিহাতী হয়ে মধুপুরে আসেন। এরই মধ্যে ডাকাত দলের সদস্যরা সবার হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে জিম্মি করেন। এরপর যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নেন। পরে ডাকাত দলের সদস্যেরা গাড়িতে থাকা এক নারীকে গণধর্ষণ করেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে পালিয়ে যান ডাকাতদলের সদস্যরা। তখন চলন্ত বাসটি কাত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
বাসযাত্রীরা বলেন, টানা তিন ঘণ্টা যাত্রীদের ওপর চালানো নির্যাতনের পর মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকায় এসে বাসটির গতি থামিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই চোখ-মুখ ও হাত বাঁধা যাত্রীদের নিয়ে বাসটি রাস্তার পাশের বালুর ঢিবিতে কাত হয়ে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই