উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বগুড়ায় ধান উৎপাদনে কৃষকরা সারা বছরই বাম্পার ফসল ফলান। জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল গত সপ্তাহে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা থাকলেও আজকে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭২ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। বি আর আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। কাটারিভোগ চালের দাম ৬৮ থেকে ৭০ টাকা থাকলেও এখন ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রণজিৎ চাল পাইকারী বাজারে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা। যা আগে ছিল ৪৭টাকা। এছাড়া ২৯ জাতের ধানের চাল গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দাম থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬টাকায়। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এসব চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি দরে।
বগুড়া কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর বগুড়ায় আমন ধান উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২০ হেক্টর। যা চাল হিসেবে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন পাওয়া গেছে। এ বছর টার্গেট করা হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর। যা চাল হিসেবে পাওয়া যাবে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। বগুড়ায় এত ধান ও চালের উৎপাদন হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে দফায় দফায় চালের দাম বেড়েই চলছে। এদিকে ধান ও চালের দাম বাড়লেও নায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এই জেলায় ধান ও চালের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। বুধবার শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার ও গোদারপাড়ার পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
রাজা বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী জাহিদ চাউল ঘরের প্রোপাইটার জাহিদুল ইসলাম জানান গত সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। মিল মালিকদের কাছে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যে কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। এখানে কোনো কারসাজির সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, বগুড়ায় অতি বৃষ্টি ও অসময়ে বন্যার কারণে ধানের অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে একটু প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। এছাড়াও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। সেজন্যই আমাদের বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
গোদারপাড়ার চাল ব্যবসায়ী সুলতান মন্ডল জানান গত ৫ দিন ধরে চালের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজারে এমন অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, 'আমরা পাইকারীতে যে চাল বিক্রি করছি সেটি খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান জানান তেলের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে। আমরা গোপনে নজর রাখছি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আশা করছি সপ্তাহ খানিকের মধ্যে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এনামুল হক জানান, এবার আমন চাষ হবে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। যা চাল হিসেবে পাওয়া যাবে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি চাল পাওয়া যাবে। বগুড়া জেলায় সব ধরণের কৃষি ফসলের সব সময়ই বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। আমরা আশা করছি আবহওয়া অনুকূলে থাকলে আমন চাষে এবারও বাম্পার ফলন হবে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় বিক্রি করা যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল