ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতি। এ নিয়ে বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্বোধনের একদিন পরেই বুধবার সকালে ভাঙ্গা বাস টার্মিনালের কাছে বিআরটিসি বাসটি আটকে দেওয়া হয়। এ সময় বাসে থাকা যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিআরটিসি বাস চলাচল করতে দেওয়া না হলে বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গায় ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির কোনো বাস ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিক্ষুব্ধ জনতা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিআরটিসি বাস চলাচল অব্যাহত রাখতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে।
জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে দাবি ওঠে বিআরটিসি বাস চালু করার। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ফরিদপুর, নগরকান্দা থেকে বাস চালু করে। এরপর মঙ্গলবার বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে বোয়ালমারী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী গুলিস্থান পর্যন্তু বিআরটিসি চারটি বাস সার্ভিস চলাচলের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান।
উদ্বোধনের পরদিন বুধবার সকাল ৭টায় বোয়ালমারী বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা গুলিস্তানের উদ্দেশে ছেড়ে যায় পরিবহনটি। পথিমধ্যে ভাঙ্গা টার্মিনালের কাছে বাসটি আটকিয়ে দেয় ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতি। এ সময় বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। ফলে চরম বিপাকে পড়েন বাসের যাত্রীরা। এ খবর বোয়ালমারীতে পৌঁছালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিক্ষুদ্ধ জনতা জেলা মালিক সমিতি পরিচালিত রাজধানী পরিবহনের একটি বাস বোয়ালমারী পৌর টার্মিনালে অবরোধ করে।
এ সময় ক্ষুদ্ধ জনসাধারণ জানায়, বিআরটিসির বাস না চললে মালিক সমিতির বাসও বোয়ালমারী রুটে চলবে না। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। পরে বোয়ালমারী থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে রাজধানী পরিবহনের বাসটি ঢাকায় ছেড়ে যায় বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ আ. ওহাব।
বোয়ালমারী থেকে ছেড়ে যাওয়া বিআরটিসি বাসের যাত্রী আশিকুর রহমানসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, ভাঙ্গা বাস টার্মিনালে আসার পর মালিক সমিতির কয়েক ব্যক্তি বাসের চালকের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়। তারা বাসের চালক ও হেলপারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমাদের (যাত্রীরা) সঙ্গেও তারা অসৌজন্যমূলক আচরণ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন।
বিআরটিসি বাস চালু অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়ে বোয়ালমারী উপজেলা ক্যাবের সভাপতি মহব্বত জান চৌধুরী বলেন, এটা ভোক্তাদের অধিকার। ভোক্তাদের অধিকার আদায়ে ক্যাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আগামীকাল প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিসি বাসের চালক রাকিবুল হাসান জানান, যাত্রীদের নিয়ে ভাঙ্গা পৌঁছালে ফরিদপুর বাস মলিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদেকের নেতৃত্বে শতাধিক পরিবহনের শ্রমিকরা আমাদের গতিরোধ করেন। মালিক সমিতির লোকজন টেনেহিঁচড়ে আমাদের নামিয়ে মারধর করে। মালিক সমিতির লোকজন হুমকি দিয়ে বলে, এই লাইনে বাস চালালে হাত-পা কেটে দেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু হয়ে বোয়ালমারী-ঢাকা রুটের বিআরটিসি বাস পরিচালনায় থাকা রাফি এন্টারপ্রাইজের তত্ত্বাবধায়ক মো. তারিকুল ইসলাম জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাসটি বোয়ালমারী থেকে ঢাকার উদ্দেশে পদ্মা সেতু হয়ে ছেড়ে যায়। ভাঙ্গা মোড়ে পৌঁছালে জেলা বাস মালিক সমিতির লোকজন সড়ক অবরোধ করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। একপর্যায়ে যাত্রীদের নামিয়ে বাসটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান জানান, কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই বোয়ালমারী থেকে বিআরটিসি বাসটি চলাচল শুরু করে। একারণে ভাঙ্গা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে ওই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনও জানে।
তিনি বলেন, বিআরটিসির বাস বন্ধ হওয়ার খবরে বোয়ালমারীর কিছু ছেলে পেলে মালিক সমিতির বাস চলাচলে অবরোধ করে। পরে পুলিশের সহায়তায় মালিক সমিতির গাড়ি রাজধানী পরিবহন ঢাকায় ছেড়ে যায়। বিআরটিসি দক্ষিণ বঙ্গের ২৩ জেলায় পদ্মা সেতু হয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলের যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে কোনো উপজেলাভিত্তিক বাস চলাচলের অনুমতি নেই। ফরিদপুরে বিআরটিসির কোনো ডিপো না থাকায় তারা কুমিল্লা ডিপোর বাস এনে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে। একারণে আমরা বিআরটিসির এই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। সমাধান না হওয়া পর্যন্তু বোয়ালমারী থেকে ঢাকার বাস বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) ম্যানেজার অপারেশন (কুমিল্লা ডিপো) মো. কামরুজ্জামান জানান, বিআরটিসির বাস বন্ধ করার কোনো এখতিয়ার নেই জেলা বাস মালিক গ্রুপের। পরিবহন সেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধ পরিকর। সেই হিসেবে ওই রুটে বিআরটিসির বাস চালু করা হয়েছে।
ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত আছি। বাস চলাচলে বাধা দেওয়ার কারো অধিকার নাই। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই