বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে আমনের ভরা মৌসুম। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এমনিতেই হতাশ কৃষক। তার ওপর সার সংকট এবং সারের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মিলছে সারের স্লিপ। ডিলারদের মাধ্যমে সারের স্লিপ পেতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করতে হচ্ছে। আবার কৃষকের ভিড় সামাল দিতে কখনো মোতায়েন করা হচ্ছে পুলিশ। জেলা প্রশাসন বলছে, বগুড়ায় বরাদ্দের চাইতে বেশী সার মজুদ রয়েছে।
জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হলেও এবার শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললেও দেখা মেলেনি স্বাভাবিক বৃষ্টির। পানির অভাবে খেতে সেচ, আগাছা পরিষ্কার, রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধে সার, কীটনাশক প্রয়োগে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এদিকে আমন মৌসুমে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করায় হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলার। ভাল ফলনের জন্য প্রয়োজন সার কিন্তু কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে পারছেনা তারা।
ইতোমধ্যে বগুড়া সদর উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করেছেন। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না সিন্ডিকেট। চলতি বছরে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সার সংকটে দুচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। রবিবার দুপুরে উপজেলার কুন্দারহাট বাজারে মেসার্স ছারওয়ার এন্টারপ্রাইজের সামনে সারের জন্য কৃষকের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কৃষকদের সামলাতে না পেরে পুলিশের সহযোগিতায় পরে লাইনে দাঁড়িয়ে সার বিতরণ করা হয়। কিন্তু দেরিতে হলেও সার পেয়ে খুশি অনেক কৃষক।
উপজেলার চকরামপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, আমন ধানের চারা ১০ বিঘা জমিতে রোপণ করেছেন তিনি। তীব্র দাবদাহে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর ‘স্লিপ’ সংগ্রহ করে সার পেয়েছেন। উপজেলার কহুলি গ্রামের আব্দুস সামাদ বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্টে ঠেলাঠেলি করে স্লিপ পেয়েছি। তাও আবার এক বস্তার বেশি দেয় না। আমন ধান রোপণের পরে এখনো সার দিইনি।
নন্দীগ্রাম উপজেলার গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মোকলেছুর রহমান বলেন, এই উপজেলায় সারের সংকট নেই। তবে কিছু কৃষক চাহিদার তুলনায় বেশি সার নিচ্ছে। যার কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সার বিক্রি করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু জানান, এই উপজেলায় চলতি আগস্ট মাসে ৮৭০ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ পেয়েছি। সারের কোনো সংকট নেই। তবে কিছু কৃষক গুজবে রবি মৌসুমের আগাম সার কেনার কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। সার নিয়ে যেন কোনো ডিলার বা ব্যবসায়ী ফায়দা লুটতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও বাড়তি দাম নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াও হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর